বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা শেখ হাসিনাকে ‘দানব’ বানিয়েছে: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পেশাজীবী পরিষদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জি এম কাদেরছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা শেখ হাসিনাকে দানব বানিয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ লর্ড এটনের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। অসীম ক্ষমতা মানুষকে নিশ্চিতভাবে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত করে। আমাদের সংবিধান সরকারকে অসীম ক্ষমতা দেয়। এ কারণেই বাংলাদেশের যেকোনো সরকারই দানবে পরিণত হতে পারে।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় পেশাজীবী পরিষদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের এ কথা বলেন।

এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের সংবিধানে এক ব্যক্তিকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা, বিচার বিভাগের প্রায় শতভাগই সরকারপ্রধানের হাতে থাকে। এ ছাড়া সাংবিধানিক পদগুলোও সরকারপ্রধানের হাতের মুঠোয়। কারও কাছেই সরকারের জবাবদিহি নেই। এ কারণে ভালো নির্বাচনে জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়েও একটি রাজনৈতিক দল দানবে পরিণত হতে পারে।

জি এম কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষ আশা করছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেবে। আমরা এই ভালো নির্বাচনের আগেই সংবিধানসহ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার চাই। আমরা চাই, ভালো নির্বাচনের পর যেন কোনো সরকার আর দানব হতে না পারে। আমাদের সন্তানেরা ছাত্র-জনতার অভুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা গুলির সামনে বুক পেতে স্বৈরাচার হাসিনার পতন নিশ্চিত করেছে। আমাদের সন্তানদের আত্মত্যাগ বিফল হতে দেব না।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। আন্দোলনের শুরুতে ৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে আমি জাতীয় সংসদে বক্তৃতা করেছি। সংসদে ও রাজপথে বলেছি, ছাত্রদের আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক।’ পরবর্তী ঘটনাগুলোর উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যখন সরকারের নির্দেশে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হলো, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। জীবন দেওয়া ছাত্রদের জাতির বীর মুক্তিসেনা বলে অভিহিত করেছি। সমন্বয়কদের যখন ডিবি অফিসে আটক করা হলো, আমরা তাদের মুক্তি দাবি করেছি। জাতীয় পার্টির যৌথ সভা করে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছি। আমার নির্দেশে জাতীয় ছাত্রসমাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে রাজপথে ছিল।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে রংপুরে জাতীয় ছাত্রসমাজের ছেলেরা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের কারণে রংপুরে আমাদের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে সর্বপ্রথম আমি রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি। তাঁর পরিবারকে বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছি। জাতীয় পার্টি সব সময় জনগণের পক্ষের দল। ভবিষ্যতেও জনগণের পক্ষে জাতীয় পার্টির অবস্থান অব্যাহত থাকবে।’

জাতীয় পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রাকিবুল হাসানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের প্রমুখ।