জাতীয় সংসদে ঋণখেলাপিদের নামের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ। তিনি বলেছেন, এই ঋণখেলাপিরাই ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন।
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কে আজাদ এ কথা বলেন।
এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। মূলত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা কারা নিল, তা সবার জানা—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, আপনি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জন্য সংসদে তাঁদের নাম প্রকাশ করুন। তাঁরাই ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন।’
স্বতন্ত্র এই সংসদ সদস্য বলেন, এখন যদি ১৫ শতাংশ কর দিয়ে তাঁদের টাকা আনতে দেওয়া হয়, এটা হবে অন্যায়।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিতে বাজেটে দেওয়া প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এ কে আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ (শূন্য সহিষ্ণুতা) ঘোষণা করেছে। সেখানে কীভাবে সার্বভৌম সংসদ কালোটাকা সাদা করার বৈধতা দিতে পারে, তা বোধগম্য নয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, কেন কালোটাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না।
এ কে আজাদ বলেন, এবারের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনপ্রশাসন খাতে ব্যয় বাজেটের ২২ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। অথচ উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। একটা মন্ত্রণালয়কে বাজেটের ২২ শতাংশ দিয়ে দেওয়া হলে তা শরীরের চেয়ে মাথা ভারী হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার হবে।
এতগুলো মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের দরকার আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য একটি প্রশাসনিক কমিটি করারও প্রস্তাব করেন এ কে আজাদ। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে পত্রিকায় এসেছে, এসি ল্যান্ড ও ইউএনওদের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গাড়ি কেনা হচ্ছে। অথচ প্রতিবেশী ভারতের মন্ত্রীরা তাঁদের দেশে তৈরি গাড়িতে চলাফেরা করেন। তাতে কি তাঁদের মানসম্মান কমে যায়—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এখন ভাবার সময় এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চললে সামনের বছর বাজেটের আকার আরও কমাতে হবে। অর্থনৈতিক যে দুঃসময়, তা আরও প্রকট হবে।
বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব কীভাবে—এই প্রশ্ন রেখে এ কে আজাদ বলেন, এবার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে জিডিপির ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০ জুন প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বা স্বল্প পরিসরে চলছে। এই অবস্থায় কীভাবে বিনিয়োগ বাড়বে?
স্বতন্ত্র এই সংসদ সদস্য বলেন, গ্যাসের ক্যাপটিভ (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ১৬ থেকে ৩০ টাকা (প্রতি ইউনিট) করা হয়েছে। শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১২ থেকে ৩০ টাকা করা হয়েছে। বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শিল্পকারখানায় ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং, শিল্প অচল অবস্থার মধ্যে।
এ কে আজাদ বলেন, দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ দিন দিন কঠিন হচ্ছে। ঋণের সুদহার, বিদ্যুৎ–জ্বালানির অপর্যাপ্ততা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত উদ্যোক্তারা। অথচ বিনিয়োগ টানতে পাশের দেশ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য নানামুখী প্রণোদনা দিচ্ছে।