এক সপ্তাহ আগেই ‘অন্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি’ মন্তব্য করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আবার তাঁর করা এক মন্তব্য নিয়ে জোর সমালোচনা হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দুই দেশেরই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটি সম্ভব যদি শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দেয় ভারত।
প্রতিবেদনটি প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হলে বিপুলসংখ্যক পাঠক নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত খবরটির প্রতিক্রিয়ায় আশিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘তাহলে দেশের জনগণের ইচ্ছায় নয়, ভারতের ভিক্ষা নিয়ে লীগ ক্ষমতায় আছে। সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ। দেশটাকে অলিখিত পরাধীন করার জন্য ধন্যবাদ।’
সাঈদ সিকদার লিখেছেন, ‘এরপর আর কী বাকি থাকল! এ কেমন স্বাধীন দেশের স্বাধীন সরকার? নিজ দেশের জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে বিদেশি প্রভুর নিকট আত্মসমর্পণ ও আহ্বান—যেভাবে পারো আমাদের ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে রাখো। জনগণ কী করবে এমতাবস্থায়? শাসকেরা নিরাপদে থাকার জন্য এ খোলাখুলি আহ্বান ও স্বীকারোক্তি। এ কেমন সরকার!’
নাম প্রকাশ না করে একজন পাঠক লিখেছেন, ‘আমাদের সক্ষমতাও যেমন খারাপ, আমাদের মেধাও তেমনই খারাপ। কী ধরনের কথাবার্তা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছেন, উনি একটু ভেবে দেখেছেন?
বিপ্লব শর্মা লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি উনার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার। না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
মারুফ রহমান লিখেছেন, দেশে কে ক্ষমতায় থাকবে, সে ব্যাপারে ভারত কীভাবে ভূমিকা রাখবে? শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারতকে কিছু করতে বলার মানে হচ্ছে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়া। তাহলে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নিজেই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে, আর বিএনপিকে দোষারোপ করছে।
মোহাম্মদ আলি রিফাই লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জনগণের কাছে দায় নেই আপনাদের, তা পুরোনো বিষয়, তাই শিকড় যেখানে প্রোথিত সেখানেই পানি ঢেলেছেন!’
হোসাইন মো. লিখেছেন, ‘কথা না বাড়িয়ে শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয় অনুরোধ করব, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মানসিক স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা চেকআপ করে ব্যবস্থা নিতে। একটা সার্বভৌম দেশের মানইজ্জত বাঁচাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া অতি জরুরি বলে জনগণ মনে করে। বোকামিরও একটা সীমা আছে, কিন্তু এই বোকামি ইতিমধ্যেই সীমা অতিক্রম করেছে!’
এই খবর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হলে সেখানে বিপুলসংখ্যক পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানান। ১২ ঘণ্টায় সেখানে প্রায় ৪ হাজার মন্তব্য করেন পাঠকেরা। শেখ ফরিদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘উনার বক্তব্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর মৃদু আঘাত। তবে মনে হচ্ছে, উনি একজন সত্যবাদী মানুষ।’
মির্জা সাফায়েত জাহান লিখেছেন, ‘আপনাকে এখন কে টিকিয়ে রাখে, সেটা দেখার বিষয়!’ হাবিবুর রহমান জুয়েল লিখেছেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী, শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে বলছি, আপাতত কিছুদিন আপনার কথা না বলাই শ্রেয়। অতিকথন দেশ, সরকার ও নিজ স্বাস্থ্য—সবকিছুর জন্যই হানিকর।’
রোকন উদ্দিন খান লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এরা স্বীকার করল যে জনগণ নয়, ভারতের সমর্থনের ওপর টিকে আছে এই সরকার।’ মোহসিন আহমেদ লিখেছেন, ‘যে সরকারকে জনগণ চায় না, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র তাকে টিকিয়ে রাখতে পারে না।’ রনি আনসারি লিখেছেন, ‘এ বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ, রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।’ নুরুজ্জামান ফিরোজ লিখেছেন, ‘ভিনদেশি প্রভুদের দয়ায় বাঁচতে চাওয়ার চেয়ে আত্মাহুতি উত্তম। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে প্রভু নেই। কে ক্ষমতায় টিকে থাকবে, সেটা এ দেশের জনগণ নির্ধারণ করবে, কোনো বিদেশ নয়।’
মো. দেলোয়ার হোসাইন লিখেছেন, ‘আফসোস হয়, যখন একটি সরকার ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে পারেনি! ক্ষমতায় থাকার জন্য অন্য একটি দেশকে আহ্বান করে নিজ দেশে হস্তক্ষেপ করার জন্য! এটা জাতি হিসেবে আমাদের কাছে খুবই লজ্জার ব্যাপার!’ সোহাগ তানভীর লিখেছেন, ‘এটা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কথা হতে পারে না। কোন সরকার থাকবে না থাকবে, সেটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে জনগণ। ভিন্ন দেশ সরকার টিকিয়ে রাখার কে? তা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভিন্ন কোনো দেশের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে, তখন বুঝতে হবে দেশের জনগণের প্রতি সেই দলের কোনো আস্থা ও নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নিশ্চিত পরাজিত হবে এই আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ এখন ভারতের হাতে-পায়ে ধরছে।’
মোস্তাক আহমেদ উজ্জ্বল লিখেছেন, ‘তাহলে দেশের জনগণের ওপর আপনি নির্ভরশীল না। আমার দৃষ্টিতে খুব আপত্তিকর কথা।’ দুলন দেব লিখেছেন, ‘দেশ সঠিকভাবে পরিচালনা করুন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, তাহলে দেশের মানুষ অবশ্যই আপনাদের চাইবে। অন্য দেশের সাহায্য নিতে হবে না।’ জসিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘এই যদি হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তাহলে দেশ তো বেহেশত হবেই। জাতির জন্যই লজ্জা।’ বোরহান উদ্দিন সেলিম লিখেছেন, ‘এই হলো একটি স্বাধীন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ? দেশের স্বার্থ ছেড়ে নিজেদের রক্ষার আবেদন করেছেন। নিজ দেশের জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে অন্য দেশের ওপর আস্থা রেখেছেন। এটা লজ্জাজনক।’ আলিনুর রহমান লিখেছেন, ‘দেশের জনগণের জন্য এটা লজ্জাকর।
স্বৈরাচারিতার কোন পর্যায়ে গেলে তারা জনগণের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়? প্রকাশ্যে ভারতের এই তাঁবেদারি খুবই আশ্চর্যজনক।’ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীন লিখেছেন, ‘এটা কখনোই কাম্য ছিল না। রাষ্ট্রের ওপর চরম আঘাত। এ বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।’