ভালো নির্বাচন হবে না, এমনটি ধারণা করছে আন্তর্জাতিক মহল

এম সাখাওয়াত হোসেন

নির্বাচন কমিশন এখন অসহায়। তাদের কিছু করণীয় নেই। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশন সংবিধানের বাইরে যেতে পারবে না। কমিশনের একমাত্র উপায় হচ্ছে, একতরফা নির্বাচন করব না—এমনটি বলা।

তবে নির্বাচনের জন্য কমিশন নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যে কমিশনই নির্বাচন করবে, সেটা তাদের জন্য ক্রেডিট (সুনাম বয়ে আনবে না) হবে না বরং ডিসক্রেডিট (দুর্নামের ভাগীদার হওয়া) হবে।

কিন্তু তারা বলতে পারে, তাদের কী করণীয় আছে। নৈতিকভাবে নির্বাচন কমিশনের করণীয় আছে। কিন্তু আইনগতভাবে করণীয় নেই। এটা আমরা বাইরে থেকে বলতে পারি। তবে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের সীমাবদ্ধতাও আছে। আর সিদ্ধান্ত তো সরকারকে নিতে হবে।

আরও পড়ুন

ভালো নির্বাচন হবে না, এমন একটি ধারণা ইতিমধ্যে নিয়ে নিয়েছে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি (সম্প্রদায়)। নির্বাচন যেভাবে হওয়ার কথা, গত দুই নির্বাচন যে ওইভাবে ভালো হয়নি। এবার যে ভালো হবে, তার নিশ্চয়তা তো সরকার জনগণকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে দিতে পারছে না। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না।

যদি সরকার এভাবে নির্বাচন করে ফেলে, তাহলে সেটা হবে আরেকটি একতরফা নির্বাচন। ইতিমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়েছি। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানা তালিকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরপরও যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, যেখানে বহু দল এবং প্রধান বড় রাজনৈতিক শক্তি, যাদের সরকার গঠনের ক্ষমতা আছে, তারা অংশ না নেয়, তাহলে সে নির্বাচন স্বীকৃতি পাবে না। বরং অন্য রকমের কোনো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এটা আমার ধারণা।

আরেকটা কথা, বিদেশি পর্যবেক্ষক মানেই যে ভালো নির্বাচন হবে, চুরি হবে না, এমন তো নয়। তাঁরা আসেন পুরো পরিস্থিতি দেখতে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা আমাদের দেশে আসছেন ১৯৯০ সালের পর থেকে।

খেয়াল রাখা দরকার, নির্বাচনে ভোট দেওয়াও মানবাধিকার। নির্বাচন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে করতে হবে। যেখানে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে, যা সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করবে। আমাদের এখানে বিদেশি পর্যবেক্ষক যাঁরা আসেন, তাঁরা দেখতে চান আন্তর্জাতিক মান আমরা কতটা বজায় রাখতে পারছি, কতটা পারছি না। তাঁদের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি (সম্প্রদায়) নির্বাচন যেভাবে দেখবে, সেটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

ইইউর প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল তিন মাস আগে (গত জুলাইয়ে) এসেছিল। এখানে আসার পর তারা মামলা, আইন-আদালত সবকিছু দেখেছে, অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করেছে। সব মিলিয়ে তারা একটি এসেসমেন্ট (মূল্যায়ন) করে বলেছে, বাংলাদেশে ভালো নির্বাচনের লক্ষণ নেই। তারা এখানে পূর্ণাঙ্গ দল পাঠাবে না। অর্থাৎ এ ধরনের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউ বাজেট দেবে না।

আমাদের দেশে মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসে ইইউর বড় দল, জাতিসংঘের একটি ছোট দল, কমনওয়েলথের দল, এশিয়ার দুটি সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। কিন্তু ইইউর নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতির মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। ইইউ যে কারণে আসছে না এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি এসে দেখে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাহলে তারা কি আসবে? তাদের একটি অগ্রবর্তী দল আসছে, যারা পরিস্থিতি দেখে প্রতিবেদন দেবে। তারপরে কি আসবে?

  • এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার