গণতন্ত্রহীনতার সুযোগে বিদেশি অপশক্তি দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং নানা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকতে ও ক্ষমতায় যেতে তাদের (বিদেশিদের) দেনদরবারে সায় দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের কথায় বেরিয়ে আসছে, ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে নাকি দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়। তাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরে পদযাত্রা কর্মসূচির আগে কাফরুল থানা এলাকায় সমাবেশে সিপিবির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কথা বলেন। তিনি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
রুহিন হোসেন বলেন, সবকিছু সিন্ডিকেট ও লুটেরা গোষ্ঠীর দখলে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে মদদ দিচ্ছে। গণতন্ত্রহীনতার সুযোগে বিদেশি অপশক্তি দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে নানা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকতে ও ক্ষমতায় যেতে তাদের (বিদেশিদের) দেনদরবারে সায় দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের কথায় বেরিয়ে আসছে, ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে নাকি দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়। তাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়।
সিপিবির এই নেতা আরও বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি ও নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে অন্ধকারের অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সুযোগ পেলে তারা অগণতান্ত্রিক পরিবেশ দীর্ঘায়িত করবে। সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুঃসহ হয়ে উঠবে। মানুষের মুক্তি আসবে না।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করে, এমন অভিযোগ নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গ টেনে রুহিন হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী নামধারী লুটেরাদের সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে বাণিজ্যমন্ত্রী তাদের কথা বলে আবার ওই কথা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলতে পারছেন না। প্রকারান্তরে সরকারই সিন্ডিকেটের পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে।
চলমান ‘দুঃশাসনের’ অবসানের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ পত্রিকা পড়ে জানা গেল, দেশে একজন অর্থমন্ত্রী আছেন। তিনি আমেরিকার টিমের সামনে অর্থনীতির ভালো খবর জানালেন। হ্যাঁ, চলমান অর্থনীতিতে উনি ভালো আছেন। ভালো আছে লুটেরা গোষ্ঠী। দেশের অনেক মানুষ কম খেয়ে, ছেলেমেয়েকে স্কুল–কলেজে না পাঠিয়ে, অসুস্থ হলে যথাযথ চিকিৎসা না করে টিকে আছেন। আর ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে।’
অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী ও এর মদদদাতাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে—হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, গণ-আন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাম জোটের সমাবেশ সফল করতে আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা উত্তর সিপিবির সভাপতি সাজেদুল হক বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অতীতের মতো আবার দুই দল নানা খেলা শুরু করেছে। জনগণ তার জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। তারা জনগণের সংকটকে তোয়াক্কা না করে বিদেশি শক্তির ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে, ক্ষমতায় যেতে চাইছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জনগণের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাম বিকল্প ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সিপিবি কাফরুল থানার সভাপতি আলী কাউসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর; সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন, রাসেল ইসলাম; যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান, খন্দকার হীরকুজ্জামান প্রমুখ। সমাবেশ শেষে পদযাত্রা করে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।