এবার নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছবি: প্রথম আলো

নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কখনো জয়ী হতে পারবে না। এখন যদি নির্বাচন হয়, তাহলে তারা ১০টার বেশি আসন পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবার এই দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। ৩৬টি দল যুগপৎভাবে ঘোষণা দিয়েছে, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। সে জন্য অবিলম্বে শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টি ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনও পরিষ্কার করে বলেছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই কালবিলম্ব না করে পদত্যাগ করুন।’

বিএনপির তিন সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের তিন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা অংশ নেন। এর আগে পাঁচটি বড় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ শেষে আজ ঢাকায় সর্বশেষ সমাবেশ করে। এতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে নেতা-কর্মীরা রমনা পার্ক, শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন সড়কে ছড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। ভয় পায় বলেই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনে কখনো জয়ী হতে পারবে না, সেটি নিশ্চিত হয়েই তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সংবিধান থেকে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৪-১৫ বছরে এই সরকার বাংলাদেশের যে ক্ষতি করেছে, অতীতে আর কখনো এমন ক্ষতি হয়নি। সবচেয়ে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা হচ্ছে, এ দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়, কথা বলতে চায়, এই দেশের লেখক-সাংবাদিকেরা লিখতে চায়, সবগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে আজকে এই সরকার একটি অলিখিত একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল চালু করেছে।’

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

‘এই সরকার ভীরু, কাপুরুষ’

এই সরকার একটা ‘ভীরু ও কাপুরুষ’ সরকার বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা নির্বাচনে ভয় পায়। বিএনপি যাতে নির্বাচন করতে না পারে, সে জন্য তারা নেতা-কর্মীদের নামে একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা দিয়েছে। এমন লোক নেই যে মামলা নেই।

আবারও ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়ার অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত মামলা দেন কেন? কারণ আপনারা ভয় পান বিএনপিকে।’ তিনি বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচন শুরুর আগে থেকেই যেভাবে মামলা দেওয়া শুরু করেছিল, আজকে আবার একই কায়দায় গায়েবি মামলা শুরু করেছে। যাতে বিএনপি নির্বাচনের আগে মাঠে আসতে না পারে। এগুলো কিসের আলামত, সে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা ইতিমধ্যে নতুন একটা কৌশল শুরু করেছে, সেটা হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র নেতা, জনপ্রিয় নেতাদের মামলা দ্রুত শেষ করে সাজা দেওয়া শুরু করেছে। এই অপকৌশল এ দেশের মানুষ সহ্য করবে না। মির্জা ফখরুল সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে, এমন প্রশ্নে সবাই সমস্বরে ‘না’ বলে জবাব দেন।

বেচারা হিরো আলম

বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনের সমালোচনা করতে গিয়ে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গে তোলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এবারকার ভোটের আলামত আমরা সেই দিন দেখলাম ঢাকা-১৭ আসনে। দেখেছেন না হিরো আলমকে। বেচারা হিরো আলম। বাচ্চা ছেলে, আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। সে একটা আশা নিয়ে গিয়েছিল যে অন্তত তাকে ভোটটা করতে দেবে। কিন্তু এটা যে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল, যারা কাউকে সহ্য করতে পারে না। ওরা মনে করে, এই দেশ তাদের বাপের তালুকদারি। অথচ ২০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের একাংশ। ঢাকা, ২২ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

গত সপ্তাহে রাজধানীর উত্তরা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির নেতা কবির হোসেনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ১৬ ঘণ্টা পর চোখ বাঁধা অবস্থায় তাঁকে বাসার সামনে ফেলে গেছে। র‍্যাবের ওপরে স্যাংশন হয়েছে, তারপরও এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এবার তারা নতুন নতুন কৌশল করেছে। সব ডিসি-এসপি তারা তাদের পছন্দমতো নিয়োগ দিচ্ছে। উদ্দেশ্য কী, দিনের আলোয় তারা কৌশল করে সিলে মেরে আবার নিয়ে যাবে। কিন্তু বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার আর সেটা হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দেন ফখরুল।’

আমান-সালামেরা যা বললেন

সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামসহ চার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতিরা বক্তব্য দেন।

আমানউল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। ’৫২–এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৯০–এর গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত ফয়সালা হয়েছে রাজপথে। এবারও ফয়সালা হবে রাজপথে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতেই হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন দিতেই হবে।

মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তারুণ্যের নেতৃত্বে আরেকটি যুদ্ধ চাই। সেই যুদ্ধে শহীদ হতে চাই। ভোটের অধিকার, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এই জন্য একাত্তর সালে যুদ্ধ করিনি।’

সভাপতির বক্তব্যে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শপথ করছি, শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত, ৪ কোটি ৭০ লাখ তরুণ ভোটারের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি বলেন, এখনই সময় জেগে ওঠার। হাতে হাত ধরে জেগে উঠুন।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছেছি। যত দিন পতন না হবে, তরুণসমাজের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হবে, তত দিন রাজপথ ছাড়ব না। এর জন্য শহীদ হতে রাজি আছি।’

এ ছাড়া বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কুমিল্লার মোস্তাক মিয়া, ফরিদপুরের শামা ওবায়েদ, ময়মনসিংহের সৈয়দ এমরান সালেহ, গত দুটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা তরুণ আইনজীবী খন্দকার আসমা হামিদ, জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ করে পত্রিকায় নিবন্ধ লেখার দায়ে চাকরিচ্যুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোরশেদ হাসান খান, চাকরিচ্যুত চিকিৎসক সানসিলা জেবরিন, নির্যাতিত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বক্তব্য দেন।