ড. ইউনূসের বক্তব্যের সমালোচনায় আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের বাংলাদেশে এখন কোনো জায়গা নেই বলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন, এর সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। দলটি তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ‘আমরা ড. ইউনূসের একটি বক্তব্য পেয়েছি, যিনি অনির্বাচিত শাসনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগকে একটি ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি প্রতিশোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।’

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এক সাক্ষাৎকার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয় গত বুধবার। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রকাশ করছে। দেশের রাজনীতিতে এ দলের এখন ‘কোনো জায়গা’ নেই।

প্রধান উপদেষ্টার ওই মন্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বলেছে, ‘আমরা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই বিবৃতি তখনই এসেছে, যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শত শত নাগরিক মব লিঞ্চিং (দলবদ্ধ সহিংসতা), হত্যা এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চলছে। একই সাথে, আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বাসস্থান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর লক্ষ্য করে প্রাণনাশী হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের হাজারো ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কিত বলে অভিযোগ করে সাংবাদিক, মুক্তচিন্তাবিদ ও লেখকদেরও নির্যাতন করা হয়েছে এবং এই ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের অধিকার পদদলিত হয়েছে।’

৮ আগস্টের পর সংঘটিত এসব ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকার অস্বীকার করেছে বলে উল্লেখ করা হয় আওয়ামী লীগের ফেসবুক পোস্টে। এতে বলা হয়, এই ইচ্ছাকৃত অস্বীকৃতি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার দাবির বিপরীতে স্পষ্টত দ্বিমুখিতার বহিঃপ্রকাশ। এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো স্বীকার না করে এবং অগণিত ভুক্তভোগীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে আওয়ামী লীগকে দানব হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, এখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের দমনে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দলটি এ–ও বলেছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়মুক্তি, ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার এবং সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে নাগরিকদের অবৈধভাবে বন্দী করা হচ্ছে। এসব ঘটনা মানবাধিকার অধিকার সংগঠন ও সাংবাদিকদের নিন্দার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে আওয়ামী লীগ বলেছে, ৪ আগস্ট থেকে সংঘটিত অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলা, যার মধ্যে হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘটনা রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপকতাকে তুচ্ছ করে দেখানো হচ্ছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের অভাব উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক।

দলটি আরও বলেছে, কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা দেশের প্রাচীনতম দলটিকে সংস্কারের অজুহাতে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ।