২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আওয়ামী লীগে আবার ক্ষমা পেলেন জাহাঙ্গীর, অপেক্ষায় অনেকে

জাহাঙ্গীর আলম
ফাইল ছবি

একবার নয়, পরপর দুবার আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। প্রথমবার ক্ষমা করার সময় বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করলে তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমা পেলেন জাহাঙ্গীর আলম। এবারও একই কথা বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীর শুধু ক্ষমাই পাননি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের স্বপ্নও দেখছেন। এখনই না হলেও ভোটের পর তাঁকে দলীয় পদে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন মাথায় রেখে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করা হয়েছে বলে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে যাঁরা দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে সাম্প্রতিক সময়ে দলে ফিরে এসেছেন।

আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশ করবে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ গাজীপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাহাঙ্গীরকে প্রয়োজন বলে দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বুঝিয়েছেন।

তবে দলে ফেরার অপেক্ষায় থাকা নেতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, তাঁরা দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক করতে না পারায় দলে ফিরতে পারছেন না। সেখানে ব্যতিক্রম হলো জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষেত্রে, তিনি দ্বিতীয় দফায় বহিষ্কৃত হওয়ার পরও দলে ফেরার সুযোগ পেলেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো অবশ্য বলছে, বিএনপি ও তার মিত্রদের এখন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার আন্দোলন চলছে। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ আছে বিএনপির। আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশ করবে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ গাজীপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জাহাঙ্গীরকে প্রয়োজন বলে দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বুঝিয়েছেন। দলীয় প্রধানের সবুজসংকেত পেয়ে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয়বার জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমা করার চিঠি দেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে একই অপরাধ যাতে না করেন, সেই শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরদিন এভাবে বিজয় চিহ্ন দেখান জায়েদা খাতুন ও তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম ২০২১ সালে বহিষ্কার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গাজীপুর জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে। গত ২১ জানুয়ারিতে তাঁকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এর চার মাসের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজের মা জায়েদা খাতুনকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে পুনরায় বহিষ্কার হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আজমত উল্লা খান। তাঁকে হারিয়ে জায়েদা খাতুন মেয়র নির্বাচিত হন।

জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে একই অপরাধ যাতে না করেন, সেই শর্ত দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম

যে কারণে জাহাঙ্গীর ভাগ্যবান

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বারবার ক্ষমা পাওয়ার পেছনে দুটি বড় কারণ আছে। প্রথমত, জাহাঙ্গীর আলমের অঢেল টাকা। দলে আলোচনা আছে যে জাহাঙ্গীর দলের নীতিনির্ধারকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। টাকাপয়সা খরচ করেন। দ্বিতীয়ত, জাহাঙ্গীর আলমের একটা নিজস্ব কর্মী বাহিনী আছে। তাঁর ভালো সমর্থকও আছে।

মে মাসে বহিষ্কার হলেও গত জুলাইয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক ‘শান্তি সমাবেশে’ বিপুলসংখ্যক লোক নিয়ে এসেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিনও টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর এলাকায় জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। ১৪ অক্টোবর ঢাকার কাওলায় সিভিল এভিয়েশন মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে তিনি বিরাট মিছিল নিয়ে আসেন।

জাহাঙ্গীরের মায়ের কাছে পরাজিত আজমত উল্লাকে গত ৪ জুন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বানিয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেয় আওয়ামী লীগ। আজমত উল্লা এখনো গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। জাহাঙ্গীর এখন এই পদ পাওয়ার চেষ্টায় আছেন।
আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরকে ভাগ্যবান বলতেই হবে। কারণ, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী নির্বাচন করে অনেকেই দলে ফিরে এসেছেন। কিন্তু বেফাঁস মন্তব্য বা বিতর্কিত কাজ করে ফেরত আসার নজির কম। জাহাঙ্গীর আলম দুটি অপরাধ করেই পার পেয়েছেন।

এখন দলীয় পদে চোখ জাহাঙ্গীরের

দলে ফেরার পর এখন জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ফিরে পেতে চান বলে জানা গেছে। গতকাল বিকেল থেকেই জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে অবস্থান করেন। রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গাজীপুর যান। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীরের মায়ের কাছে পরাজিত আজমত উল্লাকে গত ৪ জুন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বানিয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেয় আওয়ামী লীগ। আজমত উল্লা এখনো গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। জাহাঙ্গীর এখন এই পদ পাওয়ার চেষ্টায় আছেন।

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করবেন তিনি। পদ-পদবি দল ঠিক করবে। টাকা ও জনশক্তির জোরে ক্ষমা পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, জনগণের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।

দলের ফেরার কয়েক শ আবেদন

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরের শাসনামলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নানা কারণে দলের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। অনেকে দলীয় পদ হারিয়েছেন। এর মধ্যে আলোচিত হলেন সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, ক্যাসিনো-কাণ্ডে নাম জড়ানো ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তারা দলে এখনো ফিরতে পারেনি।

বরিশালের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ দলীয় কোন্দলে পদ হারিয়ে এখনো ফিরে পাননি। জাহাঙ্গীর আলম প্রথমবার বহিষ্কার হওয়ার পরপরই রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী বেফাঁস মন্তব্য করে দলীয় পদ হারান। তিনি এখনো দলে জায়গা পাননি।

গত বছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে দলের বহিষ্কৃতদের সাধারণ ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর কয়েক শ আবেদন জমা হয় আওয়ামী লীগের দপ্তরে। বিভিন্ন সময় কারও কারও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন সামলাতে বিভিন্ন সময় বহিষ্কার হওয়া নেতাদের দলে ফেরত আনার বিষয় নতুন করে আলোচনায় এসেছে বলে দলটির নেতারা বলছেন।

আরও পড়ুন