দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজটা শুরু করা যায়নি: মির্জা ফখরুল
ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটা শুরু করতে পারিনি। প্রাথমিকভাবে যেটা হয়েছে, একটা অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি হয়েছে, তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন।’
৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উদ্যাপন উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরাই দায়িত্ব দিয়েছি, তাঁরা যেন অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সে লক্ষ্যে তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাঁদের সমর্থন দিয়েছি। গোটা দেশের মানুষ তাঁদের সমর্থন দিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ৭ নভেম্বরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন করে একটা পরিচিতি, স্বাতন্ত্র্য এবং সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল।’
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব ও ভূমিকা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জাতি স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে স্বকীয় মর্যাদায় একটি স্বাধীন ভূখণ্ড নির্মাণ করার জন্য। স্বাধীনতার পরে মানুষ আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছে। মানুষ যে আশা করেছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-সমাজ নির্মিত হবে, মানুষের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এই অল্প সময়রে মধ্যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুঃশাসন মানুষের স্বপ্নগুলো চুরমার করে দেয়। তারা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। এ কারণেই ৭ নভেম্বর এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেদিন একটি নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে তরুণেরা সঠিক ইতিহাস পাননি। তাঁরা বিকৃত ইতিহাস পেয়েছেন। বিএনপি এবার ৭ নভেম্বর ব্যাপকভাবে উদ্যাপন করবে। জাতির সামনে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব তুলে ধরবে। এ লক্ষ্যে তারা সারা দেশে ১০ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে।
কর্মসূচি
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সকাল ছয়টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৬ নভেম্বর আলোচনা সভা, ৭ নভেম্বর সকাল ১০টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, ৮ নভেম্বর শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হবে। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে জেলাগুলোতেও শোভাযাত্রা হবে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে। জাসাসের উদ্যোগে বিভাগীয় শহরগুলোতেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
এ ছাড়া ৭ নভেম্বরের ডকুমেন্টারি (ভিডিও, স্থিরচিত্র) ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়াসহ ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ সভা হয়। এতে যুগ্ম মহাসচিব, বিভাগীয় সাংগঠনিক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলার সভাপতি ও সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।