ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই আ.লীগ প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ
এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে, এমন প্রার্থীও নেই। ভোটে থাকা অন্য দলের প্রার্থীদের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। এখন নিরুত্তাপ এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোটাই আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
খুলনা সিটির আজকের ভোটে উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, একদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো প্রার্থী নেই। বিএনপি তাদের দলীয় ভোটারদের নিরুৎসাহিত করছে এই ভোটে। দলের নেতা–কর্মীরা কেউ ভোটে যাচ্ছেন কি না, সেটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য কমিটি গঠন করেছে বলে ইতিমধ্যে খবর বের হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় প্রায় নিশ্চিত; এমন ধারণার কারণে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও এই নির্বাচন নিয়ে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। এই অবস্থায় সাধারণ ভোটারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ–সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে হাজির করাটাও দলটির নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক নিজেও প্রথম আলোকে বলেছেন, কেন্দ্রে ভোটার নেওয়াটাই এই ভোটে তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, আগ্রহ থাকলেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না।’
আজ সকাল আটটা থেকে খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। এখানে এবার মোট ভোটার প্রায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার। ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৭৩২টি। সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। ভোটকক্ষে স্থাপন করা হয়েছে ২ হাজার ৩১০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রার্থী পাঁচজন। আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ছাড়া বাকি প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবদুল আউয়াল, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন টানা ১৯ বছর। তিনি চারবার সংসদ সদস্য, একবার ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও খুলনা সিটিতে দুবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।
খুলনা সিটিতে গত পাঁচটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তিনবার আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুবার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে খুলনায় ভোট পড়েছিল ৫৭ শতাংশ। তার মধ্যে প্রায় ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। ৫ শতাংশ পেয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ১ শতাংশের কম ভোট পান। ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন হিসেবে আলোচিত ওই ভোটে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকই জিতেছিলেন।
গত সিটি নির্বাচনে খুলনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তীব্র লড়াইয়েও ভোট পড়েছিল ৫৭ শতাংশ। তাই এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোটাই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুলনায় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় একটা নিরুত্তাপ ও গতানুগতিক নির্বাচন হচ্ছে। এখানে শক্তিশালী পক্ষ নেই। তাই এই ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম।