এই সরকার ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের’ সরকার

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

এই সরকার ‘অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘যারা জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে যায়, সিঙ্গাপুর, কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ডে বাড়ি বানায় আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা সময় ধরে আলাপ করেন। লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, ঘৃণা জানাই।’

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর গাবতলীতে এক পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঘৃণা জানাই এই সরকারকে। আপনি গণতন্ত্রকে আজকে কবরে পাঠিয়েছেন। নির্বাচনব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছেন।’

আরও পড়ুন

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা ভোটে নির্বাচিত করেছেন। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতে ভোট করেছেন। এরপর গত ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের পকেট খালি করে দিয়েছেন। ট্যাক্স দিতে দিতে, সারচার্জ দিতে দিতে মানুষ এখন বেহাল।’

‘তামাশার উপনির্বাচন’

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল সোমবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের একটা তামাশা করেছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন অত্যন্ত হেভিওয়েট। তিনি আবার আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাংকের প্রধান। দেশের সব মানুষ তাঁকে চেনে। তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ড. আরাফাত। প্রতিদ্বন্দ্বী কে? হিরো আলম!

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওই নির্বাচনেও ভোটারদের নিতে পারেনি, ভোটকেন্দ্র খালি। পঙ্গু নির্বাচন কমিশনের হিসাবমতে ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা টেলিভিশনে দেখলাম, কোথাও ভোটার নেই। পাঁচ ঘণ্টা পর একটা ভোটার এসেছে, ওকে নিয়ে লাফালাফি কাড়াকাড়ি। ওই ভোটের রেজাল্টের পরে আরাফাত সাহেব আঙুল দেখায়, ভিক্টরি। লজ্জা লজ্জা, লজ্জা।’

আরও পড়ুন

বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলমকে মারধরের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘হিরো আলম এ দেশে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তাঁর সঙ্গে নির্বাচন করতে গিয়ে তাঁকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে মারধর করা হয়। পিটিয়ে পিটিয়ে সাপ যেভাবে মারা হয়, সেভাবে তাঁকে মারা হয়েছে গতকাল।’

পুলিশের ভূমিকার উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আবার পুলিশ বলে কী, আমরা তো আমাদের কাজ করেছি। ঠিকই করেছেন, একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে যখন মারছে, তখন আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। আর নির্বাচন কমিশন বলছে, এটা নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এসব তামাশা করে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোনো লাভ নেই।’

গতকালের উপনির্বাচনকে তামাশা হিসেবে উল্লেখ করে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করবে তারা (সরকার); ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথমে। তারাও এক দফা ঘোষণা করেছে—শেখ হাসিনার অধীনই নির্বাচন হবে। আমরাও খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই অবৈধ হাসিনা সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন নয়।’

মির্জা ফখরুল আবারও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘তখন খুব মজা লাগছিল, যখন তোমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে ক্ষমতায় এসেছিলে। এখন জনগণ ক্ষমতায় আসতে চায়। সুতরাং অবিলম্বে পদত্যাগ করো, সংসদ বিলুপ্ত করো, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও। নইলে রাজপথেই এর সমাধান হবে।’

আজ ঢাকাসহ সারা দেশে সব জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা করছে বিএনপি। গাবতলীতে ঢাকার কর্মসূচির উদ্বোধন করে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু বিএনপি নয়, ৩৬টি রাজনৈতিক দল একযোগে ঘোষণা দিয়েছে, এ সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আজ সারা দেশে এই পদযাত্রার কর্মসূচি। এটা শুধু পদযাত্রা নয়, এটা হচ্ছে বিজয়ের লক্ষ্যে যাত্রা।

মির্জা ফখরুল এই কর্মসূচিতে সবাই অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা আন্দোলনের নতুন মাত্রা, নতুন যাত্রা শুরু করি। এই যাত্রার এই মধ্য দিয়ে এক দফা দাবি আদায় করব।’

৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী সরকারকে বিদায় করতে চান: আমীর খসরু

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত শনিবার অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সম্মেলনের প্রসঙ্গ তোলেন। সেখানে বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় দেখার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দাবি করেন, তাঁকে বর্তমান একজন ব্যবসায়ীনেতা বলেছেন, তাঁদের ওপর নাকি চাপ সৃষ্টি করে এই সম্মেলন করা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, দেশের ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী এই সরকারকে বিদায় করতে চান। তাঁরা আজকে এলসি করতে পারছেন না। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের উচ্চ বিল দিয়ে তাঁরা ব্যবসা করতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো লুটপাটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আজকে ঋণ নিতে পারছেন না।

আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবদীন ফারুক, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক প্রমুখ।