ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট–দুর্নীতিবাজেরা কেন অপ্রতিরোধ্য, প্রশ্ন পঙ্কজ ভট্টাচার্যের
দেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণহীন ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিক ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রাষ্ট্র তুমি কার, বাজার তুমি কার?’ কেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও অর্থ পাচারকারী, ঋণখেলাপি, দুর্নীতিবাজ, রাঘব বোয়াল ও অপচয়কারীরা অপ্রতিরোধ্য?
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, ‘কৃষকেরা রক্ত পানি করা শ্রমে খাদ্য ফলাবেন, শ্রমের দাম এমনকি উৎপাদন খরচ মিলবে না জনগণের, অথচ চালকলের মালিকেরা কেজিতে ৮-১৪ টাকা লাভ পাবেন; এরপর কোথায় থাকে সংবিধানে বর্ণিত জনগণের রাষ্ট্রীয় মালিকানা?’
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে পঙ্কজ ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বানে ‘দাবি দিবস’ শীর্ষক এ সমাবেশের আয়োজন করে ঐক্য ন্যাপ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সমাবেশে সশরীর উপস্থিত হতে না পারায় মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের প্রায় ২০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এটি অনিবার্যভাবে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে এবং জনগণের জীবনে উঠবে নাভিশ্বাস। নিত্যপণ্যের বাজার, যাতায়াত, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে বাড়বে সংকট। বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ সব ধরনের দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি অর্ধাহার-অনাহারগ্রস্ত বিত্তহীন ও নিম্নবিত্তকে চরম বিপর্যয়ের পথে ঠেলে দেবে এবং মধ্যবিত্তের ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেবে।
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। মানুষের এখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। সর্বত্র এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, মানুষ হয়ে পড়েছে অসহায়। দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো বর্তমান সরকারের সময়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঐক্য ন্যাপ চুপ থাকতে পারে না। সরকারের কাছে দাবি জানাব, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জন্য সহনশীল করুন, পাচারকারী-লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’
দেশে সর্বজনীন রেশনিং পদ্ধতি চালুর আহ্বান জানান ঐক্য ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলব, অবিলম্বে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের গরিব মানুষদের কথা ভেবে রেশনিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। পূর্ববর্তী সরকারের সময় রেশনিং পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে গরিব মানুষের অনেক সমস্যা হয়েছে। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের আদর্শ বলে প্রচার করে। কিন্তু তারা এটা চালু করছে না কেন?
সরকারের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, সর্বজনীন রেশনিং প্রথা চালু করে সব খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমিয়ে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করুন।’
ঐক্য ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম এ সবুরের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আলিজা হাসান, ঢাকা মহানগর শাখার নেতা শাহাবুদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।