দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম, বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। বিদেশি তিনটি বড় শক্তি নির্বাচনকে সফল করতে চেয়েছে। আরও কিছু দেশ সরকারকে (আওয়ামী লীগ) জোরালো সমর্থন দিচ্ছিল।’
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জি এম কাদের এসব কথা বলেন। আজ শনিবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে দলের বর্ধিত সভার প্রথম অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
নির্বাচনের আগে গত ১২ নভেম্বরের জাপার বর্ধিত সভায় দলটির নেতারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি।
আজ বর্ধিত সভায় জি এম কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে ফাঁদে পড়ে যায়। সহিংসতার নামে তাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করে সাজা দেওয়া হয়, নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়। দেশের স্বার্থে কাজ করেও বিএনপি সফল হয়নি, আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে।
তবে বিএনপি নিজের দোষ এখন তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, ‘বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলে দেশের ভবিষ্যৎই বদলে যেত। কিন্তু আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম, দেশ এভাবেই চলত, এমন পরিস্থিতিই থাকত।’ তাঁকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা না করতে বিএনপিকে অনুরোধ করেন জি এম কাদের।
নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘সরকার কিছু পচা, মড়া ও আবর্জনা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের অনুগত বিরোধী দল করতে চেয়েছে। আমি এতে রাজি হইনি। বিভিন্ন চাপের কারণে সরকার সমঝোতা করলেও দর-কষাকষিতে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি।’
ভোটের আগে ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে যেতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ এল। প্রত্যক্ষ চাপের কথা বলব না, বুঝে নেবেন। পরোক্ষ চাপ হলো, যদি নির্বাচনে না-ও যাই, তবু নির্বাচন হবে এবং জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নেওয়া হবে। তখন জাপা গৃহপালিত বিরোধী দিল হিসেবে নির্বাচন করে রাজনৈতিকভাবে হারিয়ে যাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
সংসদ নির্বাচন ভালো হয়নি মন্তব্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংসদে আমি বলেছি, নির্বাচন ভালো হয়নি। এমন বাস্তবতায় কোনো দল রাজনীতির মাঠে টিকবে না। সরকার আমাদের স্পেস দিচ্ছে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি, সরকারের সমালোচনা করছি। বিএনপিকে তো মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। মাঠে থাকছে শুধু আওয়ামী লীগ।’
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়েছে
জি এম কাদের বলেন, ‘সরকারি দলকে আমরা রাজনৈতিক দল মনে করতে পারছি না। আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণমুখী কর্মসূচি ও আদর্শ থাকবে, যা আওয়ামী লীগের মধ্যে নেই। তারা এখন প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী বা স্বৈরতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা করছে।’
জাপা চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন তিনভাবে হয়েছে। এক. সরকারের নির্দেশে দু-একটি আসনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। দুই. অর্থ দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে যেভাবে পেরেছে, সেভাবেই জিতেছে। আর তিন. সরকারের চাহিদামতো অনেক প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়েছে। ফলে জাপার অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি।
সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম, জহিরুল আলম, উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।