ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত: মির্জা ফখরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার দায়ে ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকার জনগণের জনস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ। জনগণের ন্যূনতম যে নিরাপত্তা, সেই নিরাপত্তা দিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। এর দায় নিয়ে দুই সিটির মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় অবস্থিত দুটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন এবং উত্তর সিটিতে তাবিথ আউয়াল—এই দুজন নিজেদের রক্ত দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ছয় শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। অনেকে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুরা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তারা চিকিৎসা ঠিকমতো পাচ্ছে না। তারা মারা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য কোনো ব্যাধিই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সরকার।
কলকাতার মতো জনবহুল শহর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্য, ঢাকায় যে দুজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তাই জনগণের কাছে তাঁদের দায়বদ্ধতা নেই। তাঁরা কীভাবে নতুন নতুন বাজার তৈরি করবেন, মাঠ শেষ করে দিয়ে শপিং মল তৈরি করবেন, রাস্তার পুরোনো গাছ কেটে নতুন করে কাজ করবেন—এসব দিকে নজর তাঁদের বেশি। জনগণের ন্যূনতম সেবা দেওয়ার যে দায়িত্ব, তা তাঁরা পালন করছেন না।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকাকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবকাশযাপন এবং একই সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, মশার ওষুধ আমদানিতেও তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের মূল লক্ষ্য দুর্নীতি। দুর্নীতি করেই দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখন মানুষের জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামার জায়গার যানজট দুই ঘণ্টায়ও পার হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, সরকার প্রতিটি খাতে দুর্নীতি যে অবস্থায় গেছে, এতে অর্থনীতি চরমভাবে ধ্বংসের পথে চলে গেছে। বড় বড় অর্থনীতিবিদেরাও একই কথা বলছেন।
মনোযোগ অন্যদিকে প্রবাহিত করতে ড. ইউনূসের ইস্যু আনা হচ্ছে
ড. ইউনূসের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ড. ইউনূসের বিষয়টাকে ব্যক্তিগত হিংসার কারণে...। আরেকটা বিষয় এই মুহূর্তে এটাকে এত দ্রুত বিচারে নিয়ে আসা; আমাদের প্রধান যে ইস্যু, সরকার পরিবর্তন করতে হবে, তাদের পদত্যাগ করতে হবে—সেটাকে ডাইভারশন করার জন্য এ ধরনের ইস্যু নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও প্রাধান্য পাচ্ছে।’
ড. ইউনূসের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় উল্লখে করে অধিকারকর্মীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তাঁরা যেন সত্য কথা না বলতে পারেন, মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে না পারেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ড. ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করা হচ্ছে বা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ রকম একটা রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রে সত্য কথা বলার উপায় নেই, মানুষের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয় না, যে রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার পাওয়ার অবস্থা নেই—সেই রাষ্ট্র অবশ্যই ভেঙে পড়ছে, ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। অবিলম্বেই আমরা যদি এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারি, দেশকে রক্ষা করা কঠিন হবে।’
এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ইশরাক হোসেন পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতাল এবং তাবিথ আউয়াল শমরিতা হাসপাতালে রক্ত দিয়েছেন।