চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব, মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত: দুদককে সংসদ সদস্য নজিবুল

সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী
ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
এই সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘দুদক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে চেনে নাই। যা তা কমেন্ট করছেন সহকারী পরিচালক। চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব। মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত!’

গত সোমবার রাতে মাইজভান্ডারী শাহি ময়দানে সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরিফ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তরীকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর এ হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে।

প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে নজিবুল বশরের দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তাঁর এ দুই ছেলে হলেন তরীকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী ও সৈয়দ আফতাবুল বশর।

আলোচনা সভায় এ প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য নজিবুল বশর। ওই বক্তব্য দেওয়ার বিষয় স্বীকার করে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলেছি, সত্য বলেছি। একটাও মিথ্যা বলিনি। ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ৬৫ কোটি টাকা ফেরত দিলে আত্মসাৎ কীভাবে হয়। সেটা তারা মামলায় উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া ট্যাক্স ফাইলেও ওই টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তাহলে কীভাবে টাকা পাচার হয়?’

নজিবুল বশর প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘আমি দুদকের বিরুদ্ধে রিট করব। পাশাপাশি তাদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলব। কারণ, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। দুদক কী করছে। দুদক আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কোথায় পেল? নিশ্চয় কারও ইন্ধন থাকতে পারে।’

তরীকত চেয়ারম্যান নজিবুল বশর দরবার শরিফে তাঁর দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে মাইজভান্ডারী দরবার শরিফ মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ছিল। আজও আছে। সরকারের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নাই। আমি ১৪ দলের জোটে আছি। এখনো আছি।’

উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে প্রশ্ন করে নজিবুল বশর বলেন, ‘৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছি। নেওয়ার পর যদি ৬৫ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়, তাহলে কি টাকা আত্মসাৎ হয়? ওই মামলায় ৬৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে তা উল্লেখ করেনি দুদক। দুদক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপিকে চেনে নাই।’

তরীকত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যা–তা কমেন্ট করছে সহকারী পরিচালক। চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব। মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত। কমিশনার মোজাম্মেল সাহেব সাইন করেছিলেন। আপনার বাড়ি মাদারীপুর।’

নজিবুল বশর বলেন, ‘আমি সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে বলেছিলাম, মাইজভান্ডারী ভক্তদের বললে আপনার বাড়ির ইট একটাও থাকবে না। সব খুলে নিয়ে আসবে। একই কথা দুদক কমিশনারকেও বলছি। আমার জন্য অনেক দেশ কথা বলবে। বিএনপিকে ঘরে ঢোকানো সম্ভব। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে না। খবর আছে। এটা ১৯৯১ নয়, এটা ২০২৩।’

ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশে নজিবুল বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কী অবস্থা করেছিল? আমেরিকা কী করেছিল? সেটা ঠেকিয়েছে কে? সরকার আপনি? না, আপনাকে আমি সহযোগিতা করেছি। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। এক মাসও হয়নি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আপনাকে বলেছি, এবারও আপনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, নির্বাচন হয়ে যাবে।’
 
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আমি হাইকোর্টে রিট করব। দুদককে চ্যালেঞ্জ করব। আমার জন্য, আমার ছেলের জন্য মাইজভান্ডার দরবার শরিফ কলঙ্কিত হলে আমার মরে যাওয়া ভালো’, বলেন নজিবুল।

তরীকত নেতা বলেন, ‘যারা এমপি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, তারা মাজারবিরোধী, তরীকতবিরোধী, মাইজভান্ডারবিরোধী, আহলে সুন্নাতবিরোধী। তারা বঙ্গবন্ধুকে প্রকাশ্যে বকা দিয়েছে। মাইজভান্ডার দরবার শরিফ এটা আধ্যাত্মিক জগতের প্রাণকেন্দ্র। মাইজভান্ডারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। আমাকে সাইজ করতে চেয়েছেন। সাইজ নিজেরা হয়ে যাবেন।’

‘আমরা টাকা মেরে খাই নাই, যদি চরিত্রহরণ করে, দুদক করেছে’—উল্লেখ করে নজিবুল বশর বলেন, ‘সরকারের উচিত জড়িত ব্যক্তিদের বের করে নিয়ে আসা। আমার ছেলে বলেছে, এই মামলায় কী হবে জানি না। আমি জানি, এই মামলায় কিছুই হবে না। মিডিয়া অতিরঞ্জিত করেছে। একটা কথা বলব, মাইজভান্ডার দরবার শরিফ বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন না। এখানে হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে।’

‘আমি সেই ব্যক্তি, যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছি। আপনারা সরকার পারেননি সেটা করতে। আপনাদের সাহস হয়নি নিজামী-মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মামলা করার। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি। তাঁদের জেলে ঢুকিয়েছি। তারপর যুদ্ধাপরাধীদের মামলায় নিয়ে গেছেন। যদি আমি না থাকতাম, আপনারা তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতেন না। তাঁদের ফাঁসিও হতো না’, বলেন নজিবুল। তরীকত ফেডারেশনের করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ সময় নজিবুলের ভাই হাবিবুল বশর মাইজভান্ডারী, পুত্র তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন