হঠাৎ কেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের গ্রেপ্তার
এখন মাঠে তেমন কোনো আন্দোলনে নেই বিএনপি। তবু হঠাৎ করেই দলটির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক–বর্তমান নেতাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত কয়েক দিনে অন্তত ছয়জনের বাসাবাড়িতে অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চারজনকে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে তাঁদের পরিবার।
হঠাৎ করে কেন এই গ্রেপ্তার অভিযান, তা নিয়ে ছাত্রদল-সংশ্লিষ্ট অনেকে ধাঁধায় রয়েছেন। এটা সরকার বা প্রশাসনের ইচ্ছায়, নাকি এর পেছনে দলের কারও ইন্ধন রয়েছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। যদিও ছাত্রদল নেতাদের তুলে নেওয়া এবং গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনাগুলোকে চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার অংশ বলেই অভিযোগ করছেন বিএনপির নেতারা।
গত বুধবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নাটোর ও পটুয়াখালীর সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যান। মারজুক তাঁর ভাইয়ের অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা কলেজ শাখার সহসভাপতি আতিকুর রহমান এবং সাবেক আরেক যুগ্ম সম্পাদক জহির হাসানকেও ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, আতিকুর রহমানকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আজিমপুর অগ্রণী স্কুলের সামনে থেকে আর জহির হাসানকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।
এই তিনজনের মধ্য থেকে মারজুক আহমেদ ও জহির হাসানকে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নেয় পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে গত ২৫ জুন নয়াপল্টনে ককটেল হামলার অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমানের এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে তাঁর বাবা মো. আবুল হোসেন সরদার মঙ্গলবারই লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদলের আরও দুই নেতাকে গ্রেপ্তারে ডিবি তাঁদের বাসায় অভিযান চালিয়েছে। তাঁরা হলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম (সোহেল) এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম। তবে অভিযানের সময় তাঁদের কেউ বাসায় ছিলেন না।
খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা আছে। সব মামলায় আমি জামিনে আছি। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। দুই মাস পাঁচ দিন পর আমি জামিনে মুক্ত হই। এখন কী কারণে পুলিশ আমাকে খুঁজছে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
দেখা গেছে, গ্রেপ্তারের পর যে দুজন ছাত্রদল নেতাকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়েছে এবং যাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে, তাঁদের সবাই ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত। শুধু পদবঞ্চিতদের কেন ধরা হচ্ছে বা খোঁজা হচ্ছে, তা নিয়ে সংগঠনের ভেতরে নানা সংশয়-সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ এই ধরপাকড়ের পেছনে দলের ছাত্রবিষয়ক কোনো নেতার ইন্ধন আছে কি না, সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেকের মধ্যে সে প্রশ্ন উঠেছে।
অবশ্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা (গ্রেপ্তার-তুলে নেওয়া) গোয়েন্দা পুলিশ করেছে। হঠাৎ কেন করছে, তা আমাদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়।’
গত ১৫ জুন রাকিবুল ইসলামকে সভাপতি ও নাছির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অনেকে পদবঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে পদবঞ্চিতরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। এরপর ২৯ জুন তাঁরা পৃথক মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশেও অংশ নিয়েছেন।
দেখা গেছে, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অগ্রভাগে থাকা জহির হাসান ও মারজুক আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের সঙ্গে থাকা আতিকুর রহমান ও জিহাদুল ইসলামকে ধরার জন্য পুলিশ তাঁদের বাসায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা জিহাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার সব সময় আমাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, এখন ধরা হচ্ছে পদবঞ্চিতদের। এতে সরকার ও প্রশাসনের দমননীতির একটি দিক তো আছেই। যাঁরা পদবঞ্চিত করেছেন, তাঁদের দিক থেকেও কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’