অফশোর ব্যাংকিং বিল পাস, জাপার আশঙ্কা টাকা পাচার বাড়বে
দেশে প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং আইন করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়েছে। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক আশঙ্কা করেন, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার আরও বাড়বে।
আজ জাতীয় সংসদে ‘অফশোর ব্যাংকিং বিল-২০২৪’ পাসের জন্য উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বৈদেশিক উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং প্রচলিত ব্যাংকিং আইনকানুনের বাইরে আলাদা আইনকানুনের মাধ্যমে এ তহবিল পরিচালিত হয় ও হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রায় অফশোর ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।
জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদেরও এই আইন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে বলে তিনি মনে করেন না।
মুজিবুল হক বলেন, এই আইন হওয়ায় যাঁরা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তাঁরা যদি কর দেওয়া ছাড়া টাকা ফেরত আনেন ভালো। কিন্তু টাকা পাচারকারীরা তা ফেরত আনবেন বলে তিনি মনে করেন না। উল্টো অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারবে। সে জন্য কর দিতে হবে না। কিন্তু এটার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াটা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা জানা দরকার।
সংশোধনী আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কী অবস্থা? আমরা দেখছি সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের কঠিন অবস্থা। সাধারণ মানুষ যদি তাদের টাকা তুলে নেয়, ব্যাংকগুলোর চালানোর গতি নেই। চেক দিলে বলে টাকা নেই, বসেন, পরে আসেন।
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের টাকা নিয়ে চলে গেছে সিঙ্গাপুরে। কালকে (সোমবার) দেখলাম চট্টগ্রামে তার (এস আলম গ্রুপ) গুদামে কয়েক লক্ষ টন চিনি পুড়ে গেছে।...এখন চিনির দাম বাড়বে। সামনে রোজার মাসের জন্য গুদামজাত করে রেখেছে। আইন করি, কিন্তু তার প্রয়োগ নেই।’
ব্যাংক তদারকি করে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে—এই প্রশ্ন রেখে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘দেশীয় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে কি না, জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারা নিজেরাই খোঁজ রাখে না।
ব্যাংকগুলোর খোঁজ তারা কীভাবে করবে?’
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সেলিম মাহমুদ, শফিকুল আলম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বিলে সংশোধনী প্রস্তাব করেন।
বিলে বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিং করতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। তফসিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।