সরকারের সঙ্গে আন্দোলনে না পেরে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি: সৈয়দ ইবরাহিম
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গত জুন মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বর্তমান ‘একনায়কত্ববাদী’ সরকারকে সরানো তাঁদের প্রথম রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। আরেক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।’
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের অবস্থান বদলে ফেলেছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। নিজের দাবি করা ‘একনায়কত্ববাদী’ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল কল্যাণ পার্টি। নানা সময়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেছেন দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের এমন ‘ইউটার্ন’ রাজনৈতিক মহলে আলোচনার তৈরি করেছে।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এই নতুন জোট। এই উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন মুহাম্মদ ইবরাহিম।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না—নানা সময়ে এমন বক্তব্যে পরে নির্বাচনে কেন যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন করে পেরে না ওঠায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দাবি ছিল, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনের ব্যতীত নির্বাচনে অংশ নেব না। দাবি আদায়ে সফল না হওয়ায় দুটি বিকল্প ছিল। এক চুপ থাকা, দুই নির্বাচনে অংশ নিয়ে অবদান রাখার সুযোগ রাখা। আমরা অবদান রাখার সুযোগ নিতে চাই।’
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকেই অনেকটা আড়ালে ছিলেন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি নির্বাচনে যেতে পারেন এমন আলোচনা ছিল রাজনৈতিক মহলে।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমি ও আমার দলের টিকে থাকার সীমা আছে। এই মুহূর্তে আমার রাজনৈতিক অক্ষমতা যে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে পেরে উঠছি না। ২৮ অক্টোবরের পরে সুনির্দিষ্ট একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেখানে পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। চুপ থাকব নাকি বিকল্প ব্যবস্থা নেব। আমি বিকল্প অবস্থান নিয়েছি।’
১২ দলীয় জোট থেকে কল্যাণ পার্টিকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইবরাহিমকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘মীর জাফর’ বলে মন্তব্য করেছেন জোটের নেতারা।
অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হবে, কারও পছন্দ হবে না। সমালোচনা থাকবে। দালাল, বিশ্বাসঘাতক, মীর জাফর হয়ে গেছি বলে সমালোচনা হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমালোচনা করবেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে তা ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যার’ শামিল হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন মুহাম্মদ ইবরাহিম। আজ সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয় তিনি হঠাৎ ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ করতে চাচ্ছেন কেন? তিনি এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান।
এত দিন মুহাম্মদ ইবরাহিম বলে এসেছেন বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তবে আজ তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতীতের তুলনায় অধিকতর অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। আমরা আশা করছি, বর্তমান সরকার তাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করবে না। ভুলের পুনরাবৃত্তি করলে তা সরকারের বিপক্ষে যাবে। জনগণের কষ্ট বাড়াবে, আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। সরকার যেন সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে আরও বেশি সচেষ্ট হয়।’
তবে নিজেরা নির্বাচনে গেলেও বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে বলবেন না বলে জানান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানানোর পরিবর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাব। গ্রহণযোগ্য পরিবেশে সংলাপে বসুন ৷ জাতির মঙ্গলের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। সংলাপের দরজা যেন কোনো পক্ষই বন্ধ না করে। সংলাপ ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।’
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন এই জোটে নিবন্ধিত আরও দুটি দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জাতীয় পার্টি (মতিন) রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জোটের দলগুলো যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। বিরোধী দলের বেঞ্চে বসাই জোটের লক্ষ্য। এই জোটের ১০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি আছে।