আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত, জবাবদিহির জন্যই বিক্ষোভ

গতকাল রাতে শোক দিবস কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ঢাকা, ১৪ আগষ্টছবি: দীপু মালাকার

সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। এর মধ্য ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘আলোচনা ও দোয়া’ অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করার জন্য করা হয়েছিল।

এসব কথা বলেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, গতকাল শনিবারের বিক্ষোভ কোনোভাবেই শোক দিবসের অনুষ্ঠানের বিরোধী ছিল না। ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক পরিচয়নির্বিশেষে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত।

আজ রোববার দুপুরে 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থী' পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে বুয়েট মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েট-এর সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এক কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাঁদের তোপের মুখে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা চলে যেতে বাধ্য হন। বুয়েট কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে এ কর্মসূচি হবে, তা তাদের জানা ছিল না।

বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন। ঢাকা, ১৪ আগষ্ট
ছবি: দীপু মালাকার
আরও পড়ুন

গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে অবস্থান করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। পরে আজ দুপুরে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) সঙ্গে অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে তাঁরা হলে ফিরে যান। এরপর আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে জানানো হয়, কাল সোমবার বিকেল পাঁচটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটি স্মরণসভা হবে। সংবাদ সম্মেলনের পর শিক্ষার্থীরা ডিএসডব্লিউর সঙ্গে কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট সব রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়। বুয়েটের প্রশাসনিক আইন অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক সব শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার দেখে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালককে অবহিত করেন এবং কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন। সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উত্থাপন করা হয়। এ আন্দোলন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিমুক্ত বুয়েট গড়ে তোলার আন্দোলন। বুয়েট মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে ওই অনুষ্ঠান যথারীতি সমাপ্ত হয়। শিক্ষার্থীরা সেখানে কোনো বাধা দেননি। আমাদের বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করা। অতীতে বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিরাজমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি হয়েছেন, যাঁদের সর্বশেষ সংযোজন ছিলেন আবরার ফাহাদ। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কালো থাবায় আমাদের নিরাপদ ক্যাম্পাস যেন পুনরায় ত্রাসের রাজত্বে পরিণত না হয়, সেই আশঙ্কার জায়গা থেকে গতকাল আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমবেত হই।’

গতকাল রাতে শোক দিবস কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ঢাকা, ১৪ আগষ্ট
ছবি: দীপু মালাকার

বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করছি যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমাদের কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জোর অপপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ওই অপপ্রচার আমাদের ভীত, সন্ত্রস্ত এবং একই সঙ্গে ব্যথিত করেছে। আজকে আমরা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করতে চাই, আমাদের গতকালকের কর্মসূচি কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানের বিরোধী ছিল না। ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক পরিচয়নির্বিশেষে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন। তাঁর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সমৃদ্ধিময় সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সদা প্রস্তুত। আমরা এ–ও বিশ্বাস করি যে বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন। তাঁর চেতনা ধারণ করতে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ধারণের প্রয়োজন পড়ে না। বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সোমবার বিকেল পাঁচটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে আজ রোববার বুয়েটের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদনে বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল আয়োজনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার রুখে দিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সদা প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সব ধরনের দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে আমরা সদা অবিচল থাকব।’


শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি জানান বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাল সোমবার জাতীয় শোক দিবসে বুয়েটের বিভিন্ন ক্লাবের আয়োজনে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে একটি স্মরণসভা হবে। গতকালের অনুষ্ঠানের জন্য বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটি করা হয় একটি রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে। এটি নিয়েই মূলত ভুল–বোঝাবুঝিটা তৈরি হয়। গতকালের অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন অ্যালামনাইরা। অ্যালামনাইদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সক্ষমতা আমাদের নেই। যেটুকু আমাদের হাতে আছে তা হলো, ভবিষ্যতে অ্যালামনাইদের কেউ ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান করার অনুমতি চাইলে আরেকটু যাচাই-বাছাই করে সতর্কতার সঙ্গে অনুমতি দিতে হবে।’