ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। নগরীর কালীবাড়ি এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলের কেন্দ্রে প্রতিটি ভোটকক্ষে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সামনে পেট্রোলিয়াম জেলির ছোট কৌটা ও টিস্যুর বাক্স রাখা আছে। আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোটারের আঙুলে পেট্রোলিয়াম জেলি ঘষছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অনেকটা সময় ঘষাঘষির পরও অনেক ভোটার, বিশেষত প্রবীণ ও নারীদের আঙুলের ছাপ মিলছে না।
আজ শনিবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি থাকলেও ভোট গ্রহণের গতি বেশ ধীর। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়ছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলাতেই বেশি সময় চলে যাচ্ছে। গোপন কক্ষে ইভিএমে ভোট দিতে ভোটাররা সময়ও বেশি নিচ্ছেন।
সকাল আটটায় আসছিলাম। দেড় ঘণ্টা চলে গেল। ভোট দিতে পারলাম না। এত জটিল জিনিস (ইভিএম) আমাদের জন্য না। দুপুরে আবার আসতে বলেছে। আর আসব না।
নগরীর কালীবাড়ি এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলে পুরুষ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭৭। ভোট গ্রহণ শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২৪৩টি। আর নারী কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ২২০। ভোট গ্রহণ শুরুর দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২৩১টি।
সরেজমিন দেখা যায়, নারী কেন্দ্রে অনেক ভোটার ভোট দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছিলেন। তাঁদের দুজন লাইলী বেগম ও ভারতী রানী। জানালেন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের আঙুলের ছাপ মেলানোর চেষ্টা করেছেন। পেট্রোলিয়াম জেলি অনেকক্ষণ আঙুল ঘষলেও কাজ হয়নি। হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে, লেবু দিয়ে কচলে দুপুরের পর আবার কেন্দ্রে আসার অনুরোধ করেছেন কর্মকর্তারা।
লাইলী বেগম বলেন, ‘সকাল আটটায় আসছিলাম। দেড় ঘণ্টা চলে গেল। ভোট দিতে পারলাম না। এত জটিল জিনিস (ইভিএম) আমাদের জন্য না। দুপুরে আবার আসতে বলেছে। আর আসব না।’
এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একেকজন ভোটারের আঙুলের ছাপ মেলাতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। এভাবে চললে ভোট কত পড়বে বোঝা যাচ্ছে না। এ জন্য অনেককে দুপুরে আবার আসতে বলতে হচ্ছে।’
ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রীর সঙ্গে পেট্রোলিয়াম জেলি ও টিস্যু দেওয়া হয়েছে। ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে ভোটাররা পুরোপুরি জানেন না। এর ফলে দীর্ঘ সময় তাঁদের সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
একেকজন ভোটারের আঙুলের ছাপ মেলাতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। এভাবে চললে ভোট কত পড়বে বোঝা যাচ্ছে না। এ জন্য অনেককে দুপুরে আবার আসতে বলতে হচ্ছে।
দেখা যায়, অনেক ভোটার গোপন কক্ষে যাওয়ার পর বুঝতে পারছেন না, কী করবেন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তারা বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন কীভাবে ভোট দিতে হবে। গোপন কক্ষ থেকে একজন বের না হওয়া পর্যন্ত অন্য ভোটারের কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। এর ফলে ভোটারদের দীর্ঘক্ষণ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে ভোগান্তির কথা জানালেন সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক। তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে। ভোটারদের যেন বারবার ঘুরতে না হয়, সেটা দেখতে হবে।’ তিনি আজ সকালে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে এসব কথা বলেন।
সকাল ১০টার দিকে প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষ দুই কেন্দ্রের সামনেই ভোটারদের দীর্ঘ সারি। নারী কেন্দ্রের ১ ও ২ নম্বর কক্ষের সামনে সারি বেশ লম্বা। ২ নম্বর কক্ষে মনোয়ারা বেগম নামের এক ভোটারের আঙুলের ছাপ মেলানোর চেষ্টা করছিলেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। পেট্রোলিয়াম জেলি ঘষেও কাজ হচ্ছিল না। এভাবে চলে টানা ৭ মিনিট। তারপর উপায় না পেয়ে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমকে পরে আসতে বলে বিদায় করে দেন।
এ সময় সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বুলা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় প্রত্যেক ভোটারের আঙুলের ছাপ মেলাতে ছয় থেকে সাত মিনিট লাগছে। আবার গোপন কক্ষে গিয়েও ভোটাররা বুঝতে পারছেন না, কী করবেন। এ জন্য একেকজনের ভোট দিতে সব মিলিয়ে আট থেকে নয় মিনিট সময় লাগছে।’