সঙ্গীদের নিয়েই বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়

বিএনপির লোগো

যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের ধরে রেখে চলমান কর্মসূচি শক্তভাবে এগিয়ে নেওয়াই এখন বিএনপির লক্ষ্য। দলটির নেতারা বলছেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন (৩০ নভেম্বর) সামনে রেখে সরকার বিএনপিকে ভাঙা এবং তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত বিভিন্ন দলকে নির্বাচনে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকারের এমন তৎপরতার অংশ হিসেবে গত রাতে রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচএসে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাসায় একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপির সমালোচনা করে তাঁরা যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন জোট করে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেবেন। সৈয়দ ইবরাহিম এই জোটের নেতৃত্বে থাকবেন। তিনি আজ বুধবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২–দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা। এ বিষয়ে জানার জন্য তাঁকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

আরও পড়ুন

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ ইবরাহিমের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন), মুসলিম লীগ (কামরুজ্জামান), এনডিপি (কারি আবু তাহের), জাগপা (একাংশ), গণ অধিকার পরিষদ (নুরুল হক) বৈঠকে অংশ নেয়। তবে গণ অধিকার পরিষদ এই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয় বলে বৈঠকে জানিয়েছে।

জানতে চাইলে নুরুল হক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ সরকারের নির্বাচনকে বৈধতা দিতে আমরা নির্বাচনে যাব না। এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। কিছু সুবিধা পেতে সরকারের কৃপায় এমপি হতে কেউ কেউ নির্বাচনে যেতে পারেন।’ নুরুল হক দাবি করেন, তাঁর দল গণ অধিকার পরিষদকে নির্বাচনে নিতে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে আছে। এর মধ্যে কয়েকটি দলকে নির্বাচনে নিতে সরকারি মহল থেকে নানা প্রলোভন দেওয়ার কথা কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। কিছুদিন থেকে কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতার নীরবতা সে আলোচনাকে উসকে দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নীরব রয়েছেন।

তবে গত রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা জানান, মাহমুদুর রহমান মান্না কিছুদিন ধরে অসুস্থ। তা ছাড়া তাঁর ব্যাপারে সরকারের মনোভাব কঠোর। সে কারণে তিনি নিজেকে গুটিয়ে চলছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর দিকে। কারণ, তারা খবর পাচ্ছেন, সরকার বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকসহ মাঠে সক্রিয় অপরাপর বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে নিতে প্রতিনিয়ত নানা প্রলোভন ও চাপ সৃষ্টি করছে। ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই তৎপরতা শুরু হয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে এই তৎপরতা বাড়ছে।

এ বিষয়ে গত সোমবার কথা হয় বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত একটি দলের প্রধানের সঙ্গে। পরিস্থিতির ধারণা দিতে গিয়ে ওই নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার মরিয়া হয়ে গেছে কিছু দলকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা-রাত একের পর লোকজন আসছে। এত মরিয়া মনোভাব আমি কখনো দেখিনি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনের চলমান কর্মসূচিকে দুই পর্বে ভাগ করা হচ্ছে। কর্মসূচির প্রথম পর্ব হচ্ছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্ব হলো ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত। দুই পর্বে পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানিয়েছে, আজ থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের অবরোধ শেষে মাঝখানে এক-দুই দিনের বিরতি দিয়ে আগামী সপ্তাহটি হরতাল বা অবরোধের মধ্যে থাকতে চান নেতারা।

এখন পর্যন্ত বিএনপির আস্থা, সরকার দলকে ভাঙতে পারবে না। গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলগুলোকে এখন পর্যন্ত তাদের নির্বাচন সহযোগী করতে পারেনি। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বাম জোটকে সরকার নির্বাচনে নিতে পারেনি। তারা আশা করছে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘একতরফা’ নির্বাচনে অংশ নেবে না।

এদিকে পাঁচটি দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘সমমনা ইসলামী দলসমূহ’ গতকাল এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ (বদরুদ্দোজা আহমেদ-কাজী আবুল খায়ের) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এর মধ্যে মুসলিম লীগ ছাড়া বাকি চারটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গত রাতে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ যদি আঁতাত করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান বদলায়, বদলাতে পারে, সেটা তাদের ব্যাপার। সরকার এসব লোক নিয়ে একতরফা নির্বাচন করবে, করুক। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে আর যা–ই হোক রাজনীতি হয় না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’