ভোট দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসের উপযুক্ত জবাব দিন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাত অগ্নি সন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। সকাল সকাল পরিবার-পরিজন নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দেবেন। কেউ যেন আপনার ভোট ঠেকাতে না পারে। ভোট দিয়ে অগ্নি সন্ত্রাসের উপযুক্ত জবাব দেবেন।
আজ সোমবার রাজধানীর কলাবাগান মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করে।
বেলা ১২টার আগে থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে জনসভার মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।
জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যে ছিল বিএনপির সমালোচনা। বিএনপির ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি ছাড়া কিছু করতে পারে না। ভোট চুরি করতে পারবে না বলে তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেবে ও নির্বাচন বানচাল করবে-এত সাহস বিএনপির নেই।
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে দেশের অগ্রযাত্রা, ১৫ আগস্টের ঘটনা, ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং দেশের জনগণের উন্নত জীবনের জন্য নিজের সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। এরপর তিনি গত ১৫ বছরে তাঁর সরকারের নেওয়া উদ্যোগ, বিভিন্ন খাতে দেশের উন্নয়ন, আসন্ন নির্বাচন এবং বিএনপি ও বিভিন্ন দলের ভোট বর্জনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে। জনগণের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগই জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনকে করে দেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র থাকায় দেশে আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের জন্য কাজ করে জনগণের হৃদয় জয় করে ভোট পাই। ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে।
বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট চুরি করতে পারবে না বলে তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি শুধু মানুষ খুন করতে পারে। ২০১৩-১৪ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এসেছিল। তাদের জন্য নির্বাচন হয়ে গেল নমিনেশন বাণিজ্য। তাদের নির্বাচন ভেস্তে যায়। তারেক রহমানের টাকায় বাংলাদেশে আবার তারা অরাজকতা, অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছে। এদের ব্যাপারে সব সময় জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা দেশের সর্বনাশ করতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ করছে। এটা প্রমাণিত সত্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল, দেশের জনগণকে কিছু দেয়নি। নিজেরা সম্পদের মালিক হয়েছে, লুটপাট করে খেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকারের কথা বলে।
‘অস্বাভাবিক সরকারে নাকি মূল্য বাড়ে’
বুদ্ধিজীবীরা নানা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এর জবাব আমি দেব। গণতন্ত্র থাকলে নাকি তাদের (বুদ্ধিজীবীদের) মূল্য থাকে না। আর অস্বাভাবিক সরকার থাকলে নাকি তাদের মূল্য বেড়ে যায়। কার কত মূল্য সেটি দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে চাই।
এই ১৫ রত্ন, আপনাদের সেবক
বক্তব্যের শেষ দিকে ঢাকার ১৫টি আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই ১৫টি রত্ন আপনাদের তুলে দিলাম। এরা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে। এই নৌকা উন্নতি, সমৃদ্ধি, নিশ্চিন্ত জীবন ও শান্তি দেয়।
দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবেই এই নির্বাচন। তরুণদের আহ্বান করব নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।
লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছে বিএনপি
‘খেলা হবে?’—এই প্রশ্ন দিয়ে জনসভায় নিজের বক্তব্য শুরু করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘খেলা হবে। বিএনপি কোথায়? মাঠে আছে? পালিয়ে গেছে। খেলা থেকে বাদ পরেছে। ফাউল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেছে। ২৮ অক্টোবর ফাউল করে লাল কার্ড দেখেছে।’
আগামী ৭ জানুয়ারি ফাইনাল খেলা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ জানুয়ারি বিএনপি-জামাতকে লাল কার্ড দেখিয়ে চিরতরে বের করে দিতে হবে। লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, খুনি, ষড়যন্ত্রকারীদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া আরেফির প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাইডেনের দোস্ত কোথায়? গরগর করে ইংরেজি বলে। বাইডেন নাকি পাঠিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ধরল। বরিশালের উচ্চারণে গরগর করে বাংলা বলা শুরু করল। কত রং দেখাইলা রে জাদু, ফান্দে পড়িয়া বগায় কান্দে…।’
আগামী ৭ জানুয়ারি সবাইকে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নানক জিতবে, নাছিম জিতবে, আরাফাত জিতবে, ফেরদৌস জিতবে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কী লাভ হবে? এটা মনে করে ঘরে শুয়ে থাকলে হবে না। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। দলে দলে কেন্দ্রে আসবে ভোটাররা।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ। মঞ্চে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকার বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।