খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সম্পদ ও নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে। তবে তাঁর বার্ষিক আয় কমেছে।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তালুকদার আবদুল খালেক নিজের পেশা হিসেবে এবার উল্লেখ করেছেন ‘ব্যবসা’। তবে ব্যবসা থেকে তাঁর কোনো আয় নেই। পাঁচ বছর আগে জমা দেওয়া হলফনামায় পেশা হিসেবে তিনি মাছের ঘেরের ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর আয়ের উৎস হিসেবে রয়েছে কৃষি খাত, সঞ্চয়পত্রের সুদ এবং মেয়রের পারিতোষিক ও ভাতা।
তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। হলফনামায় দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে খালেকের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহারেরও স্থাবর সম্পদ বেড়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগেও স্বামীর চেয়ে স্ত্রী এগিয়ে। পাঁচ বছর আগে মেয়র পদে নির্বাচন করার সময় নিজের হলফনামা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। এবারও তিনি মেয়র প্রার্থী। ১৬ মে তিনি হলফনামা জমা দিয়েছেন। দুটি হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহারের নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ। এখন হাতে আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
নগদ টাকা বেড়েছে ৪৯ গুণ
বর্তমানে তালুকদার আবদুল খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ। গতবার মেয়র নির্বাচনের সময় তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ৯ লাখ ৭৮ হাজার। সে হিসাবে তাঁর কাছে নগদ টাকা বেড়েছে ৪৯ গুণ। পাঁচ বছর আগে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে ২ কোটি টাকার শেয়ার ছিল তাঁর, এখন আর ওই শেয়ার নেই।
তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহারের নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ। এখন হাতে আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। অবশ্য নগদ টাকা কমলেও তাঁর অস্থাবর সম্পদ অনেকটাই বেড়েছে।
পাঁচ বছর আগে দুটি ব্যাংকে ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিল তাঁর। আর এখন চারটি ব্যাংকে আছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর (ব্যাংকে স্থায়ী আমানত) ছিল প্রায় ৬২ লাখ টাকার। এখন তাঁর কাছে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে।
আগামী ১২ জুন ইভিএমের মাধ্যমে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ১৮ মে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নতুন বাড়ি কিনেছেন খালেক
তালুকদার খালেক জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। ওই বাড়ির বাকি অর্ধেক অংশের মালিক তাঁর স্ত্রী। সেই হিসাবে স্ত্রীও ২ কোটি ১২ লাখ টাকার মালিক। পাঁচ বছর আগে অবশ্য ওই বাড়িটি তাঁদের ছিল না।
তালুকদার খালেকের স্ত্রীর নামে আগে থেকেই রাজউকের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এ ছাড়া জমিসহ পাঁচতলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক খালেকের স্ত্রী, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংক খুলনার স্যার ইকবাল রোড শাখায় তালুকদার খালেক ও তাঁর স্ত্রীর নামে ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক। এ ছাড়া তিনি ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি এবং ৩ কাঠা অকৃষিজমির মালিক, যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, যা বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া। এখনো ওই পরিমাণ স্বর্ণালংকার তাঁর কাছে রয়েছে।
সম্পদ ও নগদ অর্থ বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তালুকদার আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অবৈধভাবে কোনো আয় করিনি। অনারিয়াম (পারিতোষিক) হিসেবে যে আয় হয়েছে, তা দিয়েই সবকিছু করা হয়েছে। আপনারা এখন সম্পদ খুঁজে বের করেন।’
আয় কিছুটা কমেছে
তালুকদার আবদুল খালেক কৃষি খাত, ব্যাংকের সুদ, মেয়রের পারিতোষিক ও ভাতা এবং বাড়ি ভাড়া থেকে আয় করেন প্রায় ৩৯ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে এসব খাত থেকেই তাঁর আয় ছিল প্রায় সাড়ে ৪৫ লাখ টাকা। এখন তাঁর চারটি ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও পোস্টাল এফডিআর রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তিনটি ব্যাংকে ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর ছিল ৩৮ লাখ টাকার।
তালুকদার আবদুল খালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। তাঁর বিরুদ্ধে আগে নয়টি মামলা ছিল। এর মধ্যে চারটিতে অব্যাহতি ও পাঁচটিতে খালাস পেয়েছেন তিনি।
জাপা প্রার্থী শফিকুলের আয় বেশি
জাতীয় পার্টির হয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন শফিকুল ইসলাম। তিনি খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তাঁর বার্ষিক আয় সবচেয়ে বেশি। বছরে তাঁর আয় ৯০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাড়িভাড়া থেকে আসে ১ লাখ ৮৬ হাজার এবং ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে পান ৮৮ লাখ টাকা।
শফিকুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে জমা মিলিয়ে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর। খুলনার মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাংকঋণেও তিনি শীর্ষে রয়েছেন। মধুমতি ব্যাংকের খুলনা শাখায় তাঁর ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। নিজেকে তিনি ‘স্বশিক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বেশি শিক্ষিত
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বৈধ হওয়া তিন প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আবদুল আউয়াল। তবে সম্পদ ও অন্য সবকিছুতে পিছিয়ে তিনি। হলফনামায় তিনি পেশার ঘরে লিখেছেন, ‘জামি’আ রশিদিয়া গোয়ালখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ী।’
ব্যবসা ও শিক্ষকতা থেকে আবদুল আউয়ালের বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষিজমি। তাঁর নামে কোনো মামলা নেই।
আগামী ১২ জুন ইভিএমের মাধ্যমে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ১৮ মে মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।