হামলা হলে মামলা হবে, গ্রেপ্তার ও সাজা হবে: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরফাইল ছবি

হামলা হলে মামলা হবে। আর মামলা হলে গ্রেপ্তার, সাজা হবে। বিএনপির নেতাদের সাজা দেওয়ার বিষয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

 আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।

মামলার রায় দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে, বিরোধী দলের এমন দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হামলা করলে মামলা হবে। মামলা হলে গ্রেপ্তার হবে, সাজা হবে। পুলিশ মারবেন আর এটা কি বিনা বিচারে যাবে? এই ঘটনা যারা ঘটায়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না? হামলা আমরা করি না, হামলা করে তারা (বিএনপি)। আর হামলা হলে মামলা হবেই। ছাড়াছাড়ি নেই।’

 আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিশাল সমাবেশ আয়োজন করতে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে তা বাতিল করা হয়। কিন্তু নির্বাচন পণ্ড করার জন্য নাশকতা করার চেষ্টা করছে যে বিএনপি, তাদের কীভাবে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার অনুমতি দিল? নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন, এটা কি ন্যায়বিচার হলো?

 ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ সরকারি দল পণ্ড করেছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কলাম প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এসব বুদ্ধিজীবী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে এত বড় ডাহা মিথ্যা কথা লিখতে পারেন! পুলিশের ওপর হামলা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলার কথা দেখলাম না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব আঁতেল বিদেশিদের ভুল পথে পরিচালিত করেন। কিসের বিনিময়ে বাস্তব অবস্থা আড়াল করেন, জানি না। তাঁরা আজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের নিবন্ধ কীভাবে ছাপা হয়, জানি না।’

নির্বাচন নিয়ে বদনামের ভাগীদার হতে চাই না  

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ বদনামের ভাগীদার হতে চায় না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি এই বিষয়ে বলেন, ‘এমন একটা নির্বাচন করব, সারা বিশ্ব যার প্রশংসা করবে। সে রকম নির্বাচন করতে চাই। অতীতে অনেক কথা, অনেকেই বলেছেন। নির্বাচন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা, কোথাও ত্রুটিমুক্ত নয়। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এবার আরও ভালো একটা নির্বাচন করব, উপহার দেব। এটাই আমাদের শপথ, অঙ্গীকার।’

 বৈঠকে দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচনটা যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, সেই ব্যাপারে দলের নেতা-কর্মীদের অবদান রাখতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চ্যালেঞ্জিং সময়, এই সময় অতিক্রম করতে হবে। স্বাধীনতার আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সংগ্রামের বিকল্প নেই।

 দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতদের প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটার তো একটা সংখ্যা আছে, তার বাইরে দেওয়া যায় না। এতে অনেকের মনে দুঃখ আছে। তারপরও আমাদের নেত্রী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিযোগিতা করার একটা সুযোগ দিয়েছেন।’

 সুযোগের অপব্যবহার যেন কেউ না করেন, সেদিকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জোর-জবরদস্তি করবেন, নৌকার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করবেন, সেটা হবে না। শৃঙ্খলার সঙ্গে থাকতে হবে। প্রতিযোগী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পায়, এমন কোনো কাজ করবেন না, করতে পারবেন না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, কেউ গায়ের জোর খাটাবেন না। আমরা এটা সহ্য করব না। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জনগণ যা চায়, তা-ই হবে।’

 বঞ্চিতদের শেখ হাসিনা মূল্যায়ন করেন জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোনো না কোনোভাবে আমরা নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করি। অন্তত শেখ হাসিনা যত দিন আছেন, তিনি খুঁজে খুঁজে কর্মীদের খবর নেন, বঞ্চিতদের সময়মতো মূল্যায়ন করেন। হাহুতাশ করার কোনো দরকার নেই। দলের সঙ্গে লেগে থাকুন, মূল্যায়ন হবে।’

জনসভা ডেকে আসন বণ্টন নয়

 ১৪-দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগির বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন কি জনসভা ডাক দিয়ে আমরা এগুলো করব? আলোচনার জন্য একটি পরিবেশ লাগে। এসব আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা তো জনসভা ডেকে হবে না, গণমাধ্যম ডেকে হবে না। আলোচনা এভাবেই হয়, অতীতেও হয়েছে। আলোচনা হয়েছে, ১৪ দল হয়েছে, মহাজোট হয়েছে এবং আসন সমঝোতাও হয়েছে। প্রক্রিয়াটা এমনই। আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে। এটা তো আর ঢাকঢোল পিটিয়ে হবে না।’

 সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আবদুর রহমান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর কবির নানক; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।