‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষোভ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী। এমন স্লোগানের সমালোচনা করে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন তাঁরা।
অন্তত দুজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘রাজাকার’ স্লোগানের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গতকাল রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে আসা বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে রাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করেন। সেখানে তাঁরা ‘তুমি কে, আমি কে/ রাজাকার, রাজাকার’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের এ স্লোগানের সমালোচনা করে ফেসবুকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
রাজাকার স্লোগান দেওয়া সবাই এ যুগের রাজাকার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কোটাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে অনেকেই পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা করেছে, আন্দোলন করেছে। এটি অবশ্যই নাগরিক অধিকার। এ ব্যপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই; কিন্তু যারা প্রকাশ্যে আত্মপরিচয়, জন্মপরিচয়, ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে, “তুমি কে, আমি কে রাজাকার! রাজাকার!” স্লোগান দিয়েছে, এরা সবাই এই যুগের রাজাকার। এরা রাষ্ট্র মানে না, আদালত মানে না, ইতিহাস মানে না এবং সর্বোপরি এই দেশকেই মানে না!’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক লিখেছেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঁচিশে মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকারেরা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত লিখেছেন, ‘যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং মেধার পক্ষে কথা বলেছে, তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি ছিল এবং আছে; কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেরে “রাজাকার” বলে স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার। নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দিতে এসব ছেলেমেয়ের লজ্জা হলো না? ...নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো দাবি আদায় হবে না।’
বিষয়টি নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে কাছাকাছি সময়ে দুটি পোস্ট দেন। একটিতে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে, ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। দাবি আদায়ে রাজাকার স্লোগানে তাঁদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অপমান যাঁরা করছেন, তাঁরা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছেন।’