অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থার মধ্যে এবার দলের জাতীয় সম্মেলনে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ জন্য সাজসজ্জা ও অন্যান্য আয়োজন অনেকটাই সাদামাটা হবে। এবার বিদেশি কোনো অতিথিকেও আমন্ত্রণ জানাবে না আওয়ামী লীগ। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া বরাবরের মতো বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রণ পাবেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে অভ্যর্থনা উপকমিটি একাধিক বৈঠক করেছে। এই কমিটির নেতৃত্বে আছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সদস্যসচিব হচ্ছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, এতে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর বাইরে রাজনীতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হবে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আমন্ত্রিতদের সমপরিমাণ উৎসুক নেতা-কর্মীও কাউন্সিলে আসবেন বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।
অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্যসচিব দীপু মনি প্রথম আলোকে বলেন, দূতাবাসের কূটনীতিক ছাড়া বিদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে দাওয়াতপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে।
গত জাতীয় সম্মেলনেও বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেয়নি আওয়ামী লীগ। ২০২০ ও ২০২১ সালে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে এক বছর ধরে বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া হবে—এই বিবেচনায় তখন জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ২০১৬ সালে ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি দেশের প্রায় ৫৫ জন অতিথি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এবার বড় দিনের কারণে দূতাবাসের কূটনীতিকদের অধিকাংশ ছুটিতে থাকবেন। ফলে তাঁদের অংশগ্রহণও কমে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি।
এবার আলোকসজ্জা একেবারেই করা হবে না বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন। আগের মতো বিশাল তোরণও হবে না। সাদামাটা কিছু তোরণ হতে পারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে মঞ্চটিতে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, সেখানেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। তবে এই মঞ্চে নৌকার আদল দেওয়া হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন লাগানো হবে।
২০১৯ সালে সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছে গাছে মরিচবাতি লাগানো হয়েছিল। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে টানানো হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। গতবার মূল মঞ্চ তৈরি হয়েছিল পদ্মা সেতুর আদলে। যা ছিল ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বিবেচনা করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে চাকচিক্য বাদ দিতে বলেছেন। ফলে আলোকসজ্জা, বাহুল্য থাকবে না।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। এ পর্যন্ত দলটির ২১টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পুনরায় নির্বাচিত হন। এবারও শেখ হাসিনাই সভাপতি থাকছেন—এই ব্যাপারে দলের নেতারা নিশ্চিতই। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি না, এটাই বেশি আলোচিত হচ্ছে দলের ভেতরে।