পাতানো নির্বাচন করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে

  • আন্দোলনের এই ধাপে এক দিন বিরতি দিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিলেট অঞ্চলে রোডমার্চ করবে বিএনপি।

  • আবার ঢাকাকে ঘিরে যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় দুটি সমাবেশ শুক্রবার।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সমাবেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশ। কেরানীগঞ্জ, ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকার দুই প্রান্তের সমাবেশে বিএনপির নেতারা বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘ফেরি করে কিছু লোকজন জড়ো করে পাতানো নির্বাচন করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। রাজনীতিবিদ কেনাবেচার হাট শুরু হয়ে গেছে ভেতরে-ভেতরে। জনগণ তা প্রতিরোধ করবে।’ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা এসব কথা বলেন।

গতকালই ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে একটি দলের কাউন্সিলে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা। সে ব্যাপারে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতারা দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আপনাদের আশপাশে জাতীয়তাবাদী দলের কোনো নেতা যেন বিপথগামী না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপির ১২ দিনের ধারাবাহিক সমাবেশ ও রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানীর দুই উপকণ্ঠ টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জে সমাবেশ হয়। কেরানীগঞ্জের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গাজীপুরের সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। দলটির হাজার হাজার নেতা-কর্মী দুই সমাবেশে অংশ নেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ভাইয়েরা, মায়েরা, বোনেরা, যাঁরা বাড়ি থেকে শুনছেন, আপনারা কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। যদি ঘরে বসে থাকেন, আর মনে করেন তারেক রহমান, মির্জা আব্বাস... আন্দোলন করছেন, এতেই হয়ে যাবে। না, এতে কিছুই হবে না—যদি আপনারা অংশগ্রহণ না করেন, শেখ হাসিনার সরকারকে সরানো যাবে না। কারণ, তাদের হাতে পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র‌্যাব আছে, কোর্ট আছে।’

‘সবকিছুকে প্রতিরোধ করে দেশকে মুক্তির আলো দেখাব’—এ মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আজকে দেশ যে অবস্থায় আছে, এখান থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে খালেদা জিয়ার মুক্তি দরকার। আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব, সেই কারণে এই সমাবেশ। আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। আমরা ঢাকা শহরসহ সারা দেশে এমন অবস্থা সৃষ্টি করব, এই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। সেই দিনের জন্য আপনারা প্রস্তুতি নিন।’

১২ দিনের ধারাবাহিক সমাবেশ ও রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল রাজধানীর দুই উপকণ্ঠ টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জে সমাবেশ হয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শুধু এই কেরানীগঞ্জে নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোডমার্চ হচ্ছে, জনসভা হচ্ছে। একটাই কারণ, এই যে সরকার, এটা কোনো সরকার নয়। এ জন্য আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’

কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ১৯ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

এখন চোর-ডাকাতদের বিচার হয় না, বিচার হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের—এমন মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিচার হবে? তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে, দেশকে ভালোবাসে—এসব কি তাদের অপরাধ?’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা বারবার বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান, বিচারপতি খায়রুল হকের “মিথ্যা” রায়ে সংশোধন করা সংবিধান? আমি বলতে চাই, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে সংবিধানে হয়েছিল, সেই সংবিধান অনুযায়ী এবার নির্বাচন হবে।’

ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে এ সমাবেশ হয়।

তৃণমূল বিএনপির কড়া সমালোচনা

গাজীপুরের সমাবেশে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামক দলে বিএনপির সাবেক দুই নেতার যোগ দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘কিছু ফেরিওয়ালা আছে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার লোক আছে। ফেরি করে তারা কিছু লোকজন জড়ো করছে। আগামীতে তারা আরেকটা নাটক করবে। ওই নাটকের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বলবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তার একটা লক্ষণ, আজকে একটা পার্টি হয়েছে, তার নাম বলব না। সে পার্টিতে কিছু শকুন ঢুকে পড়েছে।’

পাতানো নির্বাচনে কেউ পা বাড়ালে তাদের ‘পা আস্ত’ থাকবে না মন্তব্য করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বেচাকেনার হাট, মানুষের হাট আজকাল গরুর হাটে পরিণত করছে। অর্থাৎ রাজনীতিবিদ কেনাবেচার হাট শুরু হয়ে গেছে ভেতরে-ভেতরে। তাই আপনাদের আশপাশে জাতীয়তাবাদী দলের কোনো নেতা যেন বিপথগামী না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে যারাই পা বাড়াবে, তাদের পা আস্ত থাকবে না। জনগণ তাদের পা ভেঙে দেবে।’

গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মঙ্গলবার বিকেলে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কতটা দেউলিয়া, সেলফি নিয়ে বাঁচতে চায়

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটা দল কতটা দেউলিয়া হয়ে গেলে সেলফি নিয়ে বাঁচতে চায়। বিশ্বের নেতাদের পিছে পিছে হাঁটছে একটা ছবি তোলার জন্য। কত দেউলিয়া হলে পরে এ কাজ করতে পারে। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, ‘তাদের নির্ভরশীলতা পুলিশের কিছু দলীয় লোকজন, কিছু সরকারি কর্মকর্তা, কিছু লুটেরা ব্যবসায়ী, কিছু দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ। এরা হচ্ছে রেজিম, এটা কোনো সরকার নয়। সরকার হয় তখন, যখন একটি রাজনৈতিক দল ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়। আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দলে নাই। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ও নাই, ক্ষমতায় আছে একটি রেজিম।’

গাজীপুর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বেলা তিনটায় টঙ্গীর কলেজ গেট–সংলগ্ন বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন সরকারের বাড়ির সামনে এ সমাবেশ হয়। বেলা দুইটা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসেন। ব্যানার, ফেস্টুন হাতে সরকারবিরোধী স্লোগানে তাঁরা সমাবেশস্থলে আসেন।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো.শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির রহমান টিটু, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক প্রমুখ।

কেরানীগঞ্জের সমাবেশ হয় জিনজিরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে। ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান প্রমুখ।