জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঐক্য ধরে রাখতে হবে

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২১ আগস্টছবি: প্রথম আলো

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এই অভ্যুত্থান এখনো চলছে। এতে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, অভ্যুত্থানের পূর্ণ সফলতা পেতে সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।

আজ বুধবার ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পটভূমিতে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ‘জুলাই গণপরিসর’–এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আজম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান অভূতপূর্ব। যাঁরা ’৬৯–এর অভ্যুত্থান দেখেছেন, তাঁদের অনেকে মনে করেন এবারের অভ্যুত্থান অংশগ্রহণের দিক থেকে ’৬৯–এর চেয়ে ব্যাপক। এই অভ্যুত্থানের ভবিষ্যৎ বলার মতো সময় এখনো আসেনি, এটি এখনো চলমান। এই অভ্যুত্থান বেশির ভাগ মানুষের কাছে মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে। ২০১২–১৩ সাল থেকে দেশে ভয়াবহ শাসন পরিচালিত হয়েছে। ভয়ংকর দানব হিসেবে আওয়ামী লীগ চেপে বসেছিল। ১৯৯৬ বা ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগকে দিয়ে এই আওয়ামী লীগকে বিবেচনা করা যাবে না। জনগণ ভয়াবহ অসম্মান আর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে ছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন কেন সফলতা পায়নি—এমন প্রশ্ন রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, তাঁদের আন্দোলন মধ্যবিত্ত ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। তিনি মনে করেন, এবারের আন্দোলন–অভ্যুত্থানে কিছু এজমালি বা সর্বজনীন ভাষা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই সর্বজনীন ভাষা এবং জন–আকাঙ্ক্ষার কথা ভুলবে না বলে প্রত্যাশা তাঁর।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম বলেন, সময়টাকে বোঝা এবং ধরতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের গাঁথুনির যে শক্তি ছিল তাতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভাবাদর্শিক বোঝাপড়া। এটাই সামনের দিনের রাজনীতি ঠিক করবে। অভ্যুত্থানের সময় যে নতুন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে, সেটির পুনর্মঞ্চায়ন করে যেতে হবে।

মাহফুজ আলম মনে করেন, পরিবর্তনের জন্য শুধু উপরিকাঠামোর পরিবর্তন নয়, ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। দেশকে এক জায়গায় করতে হবে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বিভক্তি সৃষ্টি না করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ (রিকনসিলিয়েশন) করার ওপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, সবাই তাঁর আগের মতাদর্শিক জায়গা থেকে এই অভ্যুত্থানকে মূল্যায়ন করছেন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে বলছেন, ‘আমি, আমরা আন্দোলন করেছি।’ একটি বলকে সব গোষ্ঠী যার যার জায়গা থেকে টানা শুরু করেছে। এর পরিণতিতে বল ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লেখক রাখাল রাহা বলেন, ছাত্র সমাজের দ্বারাই বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। ছাত্ররা মূল চালিকা শক্তি হলেও প্রতিবার তারা প্রতারিত হয়েছে। ছাত্রদের ক্ষমতার কর্তৃত্বে থাকতে হবে। ইনক্লুসিভ রাষ্ট্র গঠন করতে হলে শিক্ষার্থীরা যে রাজনীতির কথা বলছেন, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

সারোয়ার তুষারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, অনুবাদক তুহিন খান, আমিরুল রাজিব, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যলায়ের শিক্ষার্থী উপমা অধিকারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।