সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনসহ নানা প্রস্তাব

নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচন ভবন, ঢাকা, ১৬ নভেম্বরছবি: প্রথম আলো

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, সংসদের আসনসংখ্যা বাড়ানো, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পছন্দে ইসি সচিব পদে নিয়োগ, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন সংশোধন, নির্বাচনের খবর সংগ্রহের পথ বাধাহীন করাসহ নানা প্রস্তাব উঠে এসেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এক মতবিনিময় সভায়।

শনিবার নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই মতবিনিময় সভা করে সংস্কার কমিশন। এর মধ্য দিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় শুরু হলো।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেন সাংবাদিকেরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের পদমর্যাদা মন্ত্রীদের ওপরে নির্ধারণ করা, নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ তিন সদস্যের করা, কমিশনে সাবেক আমলাদের আধিক্য না রাখা, সৎ ও যোগ্য লোকদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পথ তৈরির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সংশোধন, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করা, ‘না’ ভোটের বিধান আবার চালু করা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনযুক্ত সইয়ের বিধান বাদ দেওয়া, জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংজ্ঞায় ‘নির্বাচন’–এর সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত ও সুস্পষ্ট করা, আইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া, নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী অপরাধে সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া, হলফনামার তথ্য ও নির্বাচনী ব্যয় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা, পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা, পোস্টাল ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত, সহজ করাসহ নানা প্রস্তাব উঠে আসে।

সভায় নির্বাচনপদ্ধতি নিয়েও মতামত এসেছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির পক্ষে–বিপক্ষে এবং মিশ্র পদ্ধতিতে (কিছু আসনে বিদ্যমান পদ্ধতিতে আর কিছু আসনে আনুপাতিক পদ্ধতিতে) নির্বাচন করার বিষয়ে পরামর্শ আসে সভায়।

মতবিনিময় সভায় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশন এখন পর্যন্ত ২১টি বৈঠক করেছে। নির্বাচনসংক্রান্ত সব আইন ও বিধি পর্যালোচনা করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে লিখিত প্রস্তাব দিচ্ছেন। সবার মতামত নিয়ে সুচিন্তিত সুপারিশ করবে কমিশন।

নারীর ক্ষমতায়নে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে হতে পারে। তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ধরা যাক, মোট সংসদীয় আসন হবে ৪০০টি। এর মধ্যে ১০০টি আসনে শুধু নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ আসনগুলো সংরক্ষিত। প্রথমবার যে ১০০টিতে নারীরা ভোট করবেন, পরেরবার সেগুলো বাদে অন্য ১০০টি আসনে ভোট হবে। এভাবে চলতে থাকবে।

মতবিনিময় সভায় নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে অতীতে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে গোয়েন্দা সংস্থার চাপের প্রসঙ্গে আসে। জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে কাজ করেছে, তা শাস্তিযোগ্য, গুরুতর বিষয়। এগুলো বন্ধ করা উচিত।

২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন। আওয়ামী লীগসহ নিবন্ধিত কিছু দলকে চিঠি দেওয়া হয়নি কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বিষয়টি নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, কমিশন সব মত–পথের মানুষের মতামত নেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকার সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করেছে, কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের অভিপ্রায় গুরুত্বপূর্ণ। তবে কমিশনের কাছে সবার মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলি, আবদুল আলীম, জাহেদ উর রহমান, মীর নাদিয়া নিভিন, সাদেক ফেরদৌস, সাদিক আল আরমান, নির্বাচন কমিশনে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সভাপতি একরামুল হক, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩ অক্টোবর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করার কথা রয়েছে।