বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা আমাদের স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে যায় না। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিলাম সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
আমাদের বিবেচনায় ছিল এমন একটি সরকার, যার জবাবদিহি থাকবে জনগণের সব শ্রেণির প্রতি এবং দায়বদ্ধ থাকবে গোটা জাতির প্রতি। এই চেতনা থেকেই আমরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছি, মেনে নিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব। এই ভোটের ফলাফলের আলোকেই এ দেশে স্বাধীনতার সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল।
ঠিক তেমনি স্বাধীনতার পর সংবিধানপ্রণেতারা সেই চেতনার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, তাঁরা সেসব অঙ্গীকারকে বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই যাত্রাপথে বিভিন্ন সময়ে আমাদের হোঁচট খেতে হয়েছে। এখনো তেমনটাই ঘটছে, তবে একটু বেশি মাত্রায়।
সংবিধানের সময়সীমা অনুযায়ী আমাদের জাতীয় নির্বাচন অতি সন্নিকটে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই নির্বাচনব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক শক্তি বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। এতে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নিকট অতীতে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে আমাদের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। তখনকার নির্বাচন কমিশনগুলো নির্বাচনের জন্য সব দলের জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। এবারও ভিন্নধর্মী কিছু দেখা যাচ্ছে না। ফলে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
একটি জাতির ভবিষ্যৎ কয়েক মাস বা কয়েক বছরের জন্য নয়, এটি হাজার বছরের জন্য। বাধাবিঘ্ন আসতে পারে, তবে সেই বাধা উতরানো যাবে না, এমনটা আমি মনে করি না। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা দেশের জনগণের কল্যাণে দায়বদ্ধ। তাঁরা খোলামনে শর্তহীনভাবে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে পারেন।
রাত্রি যত গভীর হয়, ভোর এগিয়ে আসে তত সন্নিকটে। এই অবস্থায় আমি আশা করছি, রাজনৈতিক নেতারা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের ভোরের উজ্জ্বল আলো দেখাতে সক্ষম হবেন।
আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব