প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চান কারাবন্দী বিএনপি নেতা-কর্মীদের স্বজনেরা

‘গায়েবি মামলায় কারাবন্দী বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজবন্দীদের স্বজন’ ব্যানারে মানববন্ধন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৮ নভেম্বর
ছবি: সাজিদ হোসেন

‘গায়েবি মামলায়’ সাজাপ্রাপ্ত ও গ্রেপ্তার বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতির কাছে সরাসরি এই স্মারকলিপি জমা দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশি বাধায় তাঁরা তা দিতে পারেননি। পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বিএনপির সূত্রে জানা গেছে।

কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের স্বজনদের পক্ষে ওই স্মারকলিপিতে সই করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কারাবন্দী বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা এসব নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতির অগ্রণী ভূমিকা কামনা করেন।

স্মারকলিপিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাতটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে সংবিধানে সব নাগরিক সমান হলেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিষয়ে তা দেখা যাচ্ছে না। সরকার ষড়যন্ত্রমূলক গায়েবি মামলাকে বিরোধী দল দমনের অবলম্বনে পরিণত করেছে। এই কাজে তারা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। সরকার ও সরকারি দল বিচার বিভাগকে তাদের অপতৎপরতার বাহনে পরিণত করেছে।

প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপিতে দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে বলা হয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তারের পর অনেকের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

অনেককে অজ্ঞাত স্থানে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতন থেকে বাঁচাতে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের পরিবারের কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা দাবি করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার অনেককে নির্যাতন করে গণমাধ্যমের সামনে তথাকথিত স্বীকারোক্তি নেওয়া হচ্ছে।

স্মারকলিপিতে তৃতীয় বিষয় হিসেবে বলা হয় , রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এজাহারবহির্ভূত ব্যক্তিদের যথেচ্ছ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মধ্যরাতে বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযানে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য, শিশুরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আটক করতে না পেরে তাঁদের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য ও অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের পর্যন্ত আটক করা হচ্ছে।

স্মারকলিপিতে চতুর্থ বিষয় হিসেবে বলা হয়, বিরোধী নেতা-কর্মীদের জামিনের ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রণীত নজির মানা হচ্ছে না। অভিযুক্তের নাম এজাহারে না থাকা, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা, বয়োজ্যেষ্ঠতা, অভিযুক্তের নিজের ও অন্য অভিযুক্তের কোনো জবানবন্দি না থাকা, এজাহারদৃষ্টে মামলাটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হওয়া, অভিযুক্তের কাছ থেকে কোনো আলামত উদ্ধার না হওয়ার মতো বিষয়গুলো জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে যৌক্তিক কারণ হিসেবে বিবেচিত হলেও তা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

স্মারকলিপিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে পঞ্চম বিষয় হিসেবে বলা হয়, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় ইতিপূর্বে আগাম জামিন দেওয়া হলেও বর্তমানে অধিকাংশ আদালত আগাম জামিনের আবেদন শুনানি করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। ফলে রাজনৈতিক হয়রানির মাত্রা বেড়েই চলেছে।

স্মারকলিপিতে ষষ্ঠ বিষয় হিসেবে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক আগে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পন্ন করে তাঁদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি বিচারপদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপিতে সপ্তম তথা শেষ বিষয় হিসেবে বলা হয়,  ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের আদালতগুলো স্বাধীনভাবে বিচারকাজ চালাতে পারছেন না। বিচারকাজ পরিচালনায় সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন দৃশ্যমান।...এর ফলে বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন। বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সমালোচিত হচ্ছে।’

স্মারকলিপিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ ৮৯ জন কারাবন্দী ও সাজাপ্রাপ্ত নেতার তালিকা দেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪৩৫টির বেশি মামলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ১৭ হাজার ১০ জনের বেশি দলীয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।