ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। আজ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে দলটির নেতারা বলেছেন, ঢাকার দুটি সিটির মেয়রদের ‘অবহেলা’ ও ‘অপশাসনের’ কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপসকে দায়ী করে এসব কথা বলেছেন বিএনপির দুই নেতা তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। বিএনপির এই দুই নেতা সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী ছিলেন।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা’ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ওই দুই নেতা তাঁদের দলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএনপির পক্ষ থেকে চারটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রথমত, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেরা রক্ত দেবেন, অন্যকে রক্ত দিতে উৎসাহিত করবেন এবং কোথায় রক্ত পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে তথ্য দিয়ে তাঁরা অনলাইনে রক্তের জন্য সাইট তৈরি করবেন।
দ্বিতীয়ত, এডিস মশা ও ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রচারণা চালাবে বিএনপি। তৃতীয়ত, সরকারি স্থাপনায়, যেখানে এডিস মশার প্রজননস্থল রয়েছে, তা চিহ্নিত করবেন তাঁরা। চতুর্থত, জলাবদ্ধতা যেসব এলাকায় আছে, সেখানে এলাকাবাসীকে নিয়ে এডিস মশা নিধনে কাজ করবেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা উত্তর সিটির গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ডেঙ্গু মহামারির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সতর্কতা তাদের কানে পৌঁছেনি। যে কারণে ডেঙ্গু নিয়ে আমরা সমস্যায় রয়েছি।’
সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘তাঁরা তামাশার মতো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় খালে-লেকে মাছ ও ব্যাঙ ছেড়েছে। কিন্তু এডিস মশার একটি বড় উৎস সরকারি বিভিন্ন কার্যালয় ও স্থাপনা, ওই সব জায়গায় কোনো অভিযান, জরিমানা কিছুই করা হচ্ছে না। দুই মেয়র সাধারণ মানুষকে দোষী করে তাদের মাথার ওপর জরিমানার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে হিসাব দিচ্ছে, তার তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করে তাবিথ আউয়াল বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা, ওষুধ কিংবা চিকিৎসা কিছুই দেওয়া সম্ভব হবে না।
দক্ষিণ সিটির গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, দুই সিটির মেয়র বিনা ভোটে জোর করে ক্ষমতা দখল করে সিটি করপোরেশনের চেয়ারে বসে আছেন। তাঁদের ব্যর্থতার কারণেই ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ বছরের মধ্যে দেশ ডেঙ্গুর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে অতিক্রম করছে। মেয়রদের জবাবদিহির অভাবে এ পরিস্থিতি হয়েছে।
ইশরাক হোসেন আরও বলেন, মেয়র পদটি গুরুত্বপূর্ণ, দায়িত্বশীল ও নগরপিতার পদ। বর্তমানে যাঁরা এই পদে বসে আছেন, তাঁরা এই পদের গুরুত্বও বোঝেন না। নগরপিতার যে ভূমিকা, সেটা রাখা তো দূরের কথা, স্বৈরাচারী একটি মনোভাব নিয়ে সিটি করপোরেশনকে পরিচালনা করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে নিজেদের মনগড়া ও কিছু লোকদেখানো কাজ করছেন। আয়তন ও জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যাপ্তসংখ্যক কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে তাঁরা ব্যর্থ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া পরামর্শও তাঁরা বাস্তবায়ন করেননি।
সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৩৭, ২০২২ সালে তা দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশে। এ বছর ১৭ জুলাই পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৫৫। বেশি মারা যাচ্ছে তরুণেরা।
এ ছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার জনের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ তাপসের বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা করা হয় বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে। এতে বিএনপি নেতারা বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নগরবাসীকে জরিমানার ভয় দেখাচ্ছেন মেয়ররা। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়নের নামে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। তাঁরা আরও বলেন, কোনো রকম সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ছাড়াই নগরবাসীকে ছাদবাগান করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ওই ছাদবাগানকেই আবার মশার কারখানা বলে জরিমানা করা হচ্ছে নাগরিকদের। মেয়ররা নিজেদের খামখেয়ালি, ব্যর্থতা ও দুর্নীতিকে আড়ালে করতেই নগরবাসীকে দোষী হিসেবে উপস্থাপন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।