অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসেও কোনো সংস্কার দেখি না: মাহমুদুর রহমান মান্না

আলোচনা সভার মঞ্চে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (মাঝখানে)। আজ ৯ ডিসেম্বর, জাতীয় প্রেসক্লাব–ছবি: প্রথম আলো

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসেও কোনো সংস্কার দেখেন না বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমি সংস্কার দেখি না। সংস্কার মানে বুঝি বিষয় কিংবা বস্তুর গুণগত রূপান্তর। গুণগত রূপান্তর কী হয়েছে?’

মান্না আরও বলেন, ‘পুলিশে বিরাট ঝামেলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ তো ঠিক হয়নি, এখন পর্যন্ত পুলিশ দায়িত্বে ফেরেনি। এখন পর্যন্ত পুলিশ পুরোনো অভ্যাসও ছাড়েনি। কী করতে পেরেছে ওই জায়গায়? পুলিশে নতুন একজনকে আইজিপি করে দিলেই গুণগত রূপান্তর বলা যায় না।’

‘নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে: গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও নির্বাচনের পথনকশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সভার আয়োজন করে রাষ্ট্র ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পর কিছু সংস্কার করার কথা বলেছিল জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক মাসে কী সংস্কার হয়েছে? আমি চার মাস এক দিন পর বলছি, গুণগত সংস্কার হয়নি। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন—কিছুই হয়নি।

সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ পার হয়ে গেছে জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের নেতা বলেন, তাদের ৯০ দিনের হানিমুন পিরিয়ড পার হয়ে গেছে। এখন যা সামনে আছে, সেই সময়ের মধ্যে তারা কত দূর কী করবে? যেসব কমিশন করে দিয়েছে, তারা ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। সরকার এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ সরকার কি ঠিকমতো আলোচনা করতে পারবে?

মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম তো কমাতে পারেননি কিছু। আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে পারেননি। ঢাকা শহরের যানজট কিছু কমেনি। এগুলো বাদ দেন, ভোট করা যাবে। পুলিশ-প্রশাসন যদি ঠিক না হয়, তাহলে নির্বাচন করবেন কীভাবে? অথচ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভালো নির্বাচন প্রয়োজন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বেশি করে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা তো বলেন না। খালি কী হয়, পূজার মধ্যে গন্ডগোল লাগতে পারে, তখন আমাদের ডাকে। ১৫ আগস্ট কী করব, তখন ডাকে। এখন আবার ভারত নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, এখন বসল।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গঠনের মাধ্যমে ভারতকে চির জীবনের জন্য পরাজিত করা গেছে। ভারত আর আমাদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। এ বার্তা দেওয়া গেছে যে বাংলাদেশকে পরাজিত করা আর সম্ভব নয়। ভারত জোর করে, কৌশল করে সাফল্য না পেয়ে আলোচনা ও সন্ধির চেষ্টা করছে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সবার অংশগ্রহণে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, এটাকে বিভক্ত করা যাবে না। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা সফল করতে হলে অনেক দূর যেতে হবে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ সরকারের প্রধানতম দায়িত্ব নির্বাচন করা।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘অনেক সংস্কার করলাম; কিন্তু যাঁরা ক্ষমতায় বসবে, তাঁদের মধ্যে হাসিনার চরিত্র ঢুকবে না—এর নিশ্চয়তা কী? পাঁচ আগস্ট যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে আগের সবকিছু ফেলে দিতে হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন, মুক্তচিন্তার আহ্বায়ক আবুল কাসেম হায়দার, রাষ্ট্র সংস্কারের সদস্যসচিব নুরুল কাদের প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।