বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে চিন্তিত কর্মীরা
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একের পর এক গ্রেপ্তারের ঘটনায় দলের মাঠপর্যায়ের নেতা–কর্মীরা চিন্তিত। গ্রেপ্তার এড়াতে এখন দলটির প্রায় সব নেতাই আত্মগোপনে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের আন্দোলন কর্মসূচি কোন পথে এগোবে, তা নিয়েও দলটিতে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পর স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা বিএনপির মাঠের নেতা-কর্মীদের চিন্তায় ফেলেছে। আমীর খসরু বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান। তিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিএনপির পক্ষে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তাঁর গ্রেপ্তার এই যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটাবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, শীর্ষ নেতা ছাড়া মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করে সরকার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপনের গ্রেপ্তারও নেতা-কর্মীদের ভাবাচ্ছে। জহির উদ্দিন বুদ্ধিভিত্তিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। তাঁর মতো নেতাকেও গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় করা মামলায় আসামি করে দ্রুত গ্রেপ্তারের ঘটনা নেতা-কর্মীদের ভাবাচ্ছে। বছরখানেক আগে তাঁকে মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক করা হয়। জহির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মিডিয়া সেল অল্প সময়ের মধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নেতা-কর্মীদের অনেকেই বলেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জহির উদ্দিন স্বপনের গ্রেপ্তার দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগে ছেদ ঘটাতে; আরেকজনের গ্রেপ্তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচির প্রচারণা থামাতে।
আমির খসরু ও জহির উদ্দিন ছাড়া ইতিমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তিন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মজিবর রহমান সরোয়ার ও খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই দিনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্যসচিবসহ অন্তত ২০টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ অবস্থায় সামনে সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনের কর্মসূচি কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
অবশ্য গতকাল শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আন্দোলন দমানোর জন্য সরকারের কোনো কৌশলই সফল হবে না। বিএনপির নেতৃত্বকে দুর্বল করা যাবে না।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, শীর্ষ নেতা ছাড়া মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করে সরকার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে। দলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বিকেল পর্যন্ত) সারা দেশে বিএনপি, এর অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের ২৯২ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ১১টি মামলা করে ১ হাজার ৪৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ‘একদফা’র আন্দোলন চলতেই থাকবে। আগামী রোববার ভোর থেকে ৪৮ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচির উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাবেন তাঁরা।
রিজভী বলেন, আবারও দেশে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে সরকার ‘অভিনব মিশনে’ নেমেছে। তিনি দাবি করেন, সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগী প্রায় দুই কোটি মানুষকে টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ। এসব উপকারভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও নেতারা, যাতে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকছেন। এসব সমাবেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে; ভোটকেন্দ্রে না গেলে কার্ড বাতিলেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোটার উপস্থিতি দেখাতে এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।