এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না: ইইউ প্রতিনিধিদলকে জামায়াত
এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে বংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ প্রসঙ্গে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে দলটি বলেছে, এ দুটি নির্বাচনে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
আজ শনিবার বিকেলে ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাদের গুলশানের দপ্তরে বৈঠক করেন জামায়াতের নেতারা। সেই বৈঠক শেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বেলা আড়াইটায় আবদুল্লাহ তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াতের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের প্রাক্–নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ইইউর ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে আবদুল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় বৈঠকে অংশ নেওয়া জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ ও মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুর রব উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে করা যায়, এ ব্যাপারে মতবিনিময় হয়েছে।
এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, এমন বক্তব্যের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ তাহের আজ সিলেটে জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘এখনই নির্বাচনের চার মাস আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে মিটিং করতে দিচ্ছে না, আমাদের অফিস খুলতে দিচ্ছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এটা আশা করার কোনো কারণ নেই। সরকার এখনই প্রমাণ করছে, তাদের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আমরা সে কথাটি অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলেছি।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, তারা ইইউ প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন নজিরবিহীন প্রতারণার নির্বাচন ছিল। যেখানে ১৫৪ জন প্রার্থীকে নির্বাচনের দিনের আগেই নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ২০১৮ সালে নির্বাচনটি আগের রাতে হয়ে গেছে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নতুন সংযোজন।
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘সেই আলোকে আমরা বলেছি, আগামী যে নির্বাচন হবে, সেটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হলেই আগামী দিনে বাংলাদেশ বাঁচার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং কেয়ারটেকার সরকার অথবা নির্দলীয় সরকার, যে নামেই হোক একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।’
জামায়াত নেতা জানান, ইইউ প্রতিনিধিদলও কূটনৈতিক ভাষায় তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে প্রায় ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ১০ বছর পর গত ১০ জুনে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে তাঁদের সমাবেশ করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, সরকার কিছুটা হলেও গণতান্ত্রিক হয়েছে অন্যের অধিকারের ব্যাপারে। কিন্তু সিলেটে গত রাতের (শুক্রবার) ঘটনায় আবার সেই পুরোনো ফ্যাসিবাদের এবং স্বৈরাচারের চিত্রই আমাদের সামনে আসছে।’
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার পর তাঁরা এক সপ্তাহ ধরে প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যার পরে পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনুমতি না দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে তাঁরা সিলেটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হোটেলে বুকিং দিয়েছিলেন। পুলিশ সে স্থানটিও ঘেরাও করে রাখে। হোটেলের বুকিং বাতিল করতে বাধ্য করা হয়েছে। পরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা আগামী শুক্রবার আবার রেজিস্টারি মাঠে জনসভার ঘোষণা দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে ‘অর্থহীন’
জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (ইইউ প্রতিনিধিদল) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, পর্যবেক্ষক পাঠানোটা আপনারা কীভাবে দেখেন? আমরা বলেছি, বাংলাদেশে যেকোনো পর্যবেক্ষককে আমরা স্বাগত জানাই; যদি সেটা কোনো নির্বাচন হয়। আর যদি সেটা নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়, তাহলে এখানে পর্যবেক্ষক আসা অর্থহীন।’
আবদুল্লাহ তাহের আরও বলেন, ‘আমরা তাঁদের এ–ও বলেছি, আপনারা একটা “অবৈধ” নির্বাচন দেখতে আসবেন। এতে আপনারা সম্মান বোধ করবেন কি না, এটা আপনাদের বিবেচনার বিষয়।’
এই জামায়াত নেতা উল্লেখ করেন, ‘যদি সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়, তাহলে আপনারা পর্যবেক্ষক পাঠালে আমরা আপনাদের স্বাগত জানাব। আর একদলীয় একটা বাজে নির্বাচনের প্রহসনে আপনারা এসে তাদের কিছুটা বৈধতা দেবেন, এটা বোধ হয় সমীচীন হবে না।’