খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরাতে আলোচনা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং করেন। ঢাকা, ২৯ জানুয়ারিছবি: পিআইডি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনতে দেশটির হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে ঢাকায় কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। কানাডার হাইকমিশনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করেন।

এদিন কানাডার হাইকমিশনার ছাড়াও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি জিয়াওকুন শির পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।

কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডায় মৃত্যুদণ্ড নেই, সেটি একটি অসুবিধা বলে আমাকে হাইকমিশনার জানিয়েছেন। আমি দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কানাডার হাইকমিশনার বিষয়টি তাঁর সরকারকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।’

সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে কয়েক বছর ধরে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ থেকে আরও অভিবাসী নেওয়ার জন্য ‘প্রিফারেন্সিয়াল’ ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশেষ করে কৃষি খাতে নেওয়ার জন্য এবং এ দেশের শিক্ষার্থীদের কানাডার স্টুডেন্টস ডিরেক্ট স্কিমের (এসডিএস) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

ড. ইউনূস সঠিক বলেননি

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস মন্তব্য করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে শ্রমিকেরা নয়; সরকার মামলা করেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তিনি যা বলেছেন, তা সঠিক নয়। ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের পাওনা সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেনি, তারা বঞ্চিত হয়েছে। এতে সংক্ষুব্ধ শ্রমিকেরাই মামলা করেছে। এ জন্য শ্রম অধিদপ্তরের একটি অনুমোদন লাগে, সেটি তারা নিয়েছে। বিস্তারিত আইনি ব্যাখ্যা আইন মন্ত্রণালয় দেবে।’

মিয়ানমার থেকে ১৩টি মর্টার শেল বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়েছে—এ বিষয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে দেশটির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের মর্টার শেল যাতে আর আমাদের সীমান্তে এসে না পড়ে, এ বিষয়ে নজর রাখছি। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক আছেন। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও এ বিষয়ে আমরা যোগাযোগের মধ্যে রয়েছি।’

ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডেনমার্কের দ্বিতীয় উন্নয়ন অংশীদার বাংলাদেশ। তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। জলবায়ু ইস্যুতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ডেনমার্কের সঙ্গে কাজ করছি। সামনেও এই বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ডেনমার্কের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।’

‘যারা নিজেদের স্বার্থে গণহত্যার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকে, তাদের দিয়ে দেশের স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়’

বাসসের খবরে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি–জামায়াত এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। যারা এভাবে নিজেদের স্বার্থে গণহত্যার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকে, তাদের দ্বারা কখনো দেশের স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘অতীতেও বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, ফিলিস্তিনে হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসেবে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম। তাদের স্পিকার এবং সংসদের নেতা সেটি গ্রহণ করেনি।’

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ আয়োজিত ‘স্টপ জেনোসাইড ইন প্যালেস্টাইন, সলিডারিটি ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ রামাদান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তার জন্য দেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন।