সরকার দমন–পীড়ন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ধ্বংস করতে চাইছে: গণতন্ত্র মঞ্চ

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ দুপুরে এক সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা–কর্মীরাছবি: সংগৃহীত

সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় কর্মসূচির বিরুদ্ধে সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি এবং শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেছেন, ‘সরকার গুন্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী দিয়ে হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে এবং দমন–পীড়ন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ধ্বংস করতে চাইছে।’

আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এ কথাগুলো বলেন। ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের’ প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টনে মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার এক মরণখেলায় নেমেছে। মানুষকে হত্যা করছে, গুম করছে, দেশ ধ্বংস করছে, তবু তারা ক্ষমতা ছাড়বে না।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা নেমেছে কোটা সংস্কারের জন্য, শিক্ষকেরা আন্দোলন নেমেছেন। এসব আন্দোলন ফুঁসে উঠছে বলে গুন্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে। আন্দোলনকে দমন–পীড়ন করে ধ্বংস করতে চাইছে।’

শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন এবং শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ছাত্রদের এই আন্দোলনে বিরোধী দল কোনো ষড়যন্ত্র করছে না। ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই, শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই। এই দেশের জনগণের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা আছি, থাকব।’

ট্রানজিট দিয়ে কী পেলেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ জুন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে সাতটি নতুন, তিনটি নবায়নকৃতসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। আজকের সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ট্রানজিট দিয়ে কি অন্যায় করলাম?” আমরা যদি পাল্টা প্রশ্ন করি ট্রানজিট দিয়ে কী পেলেন? আগে বলা হয়েছিল ট্রানজিট দিলে অনেক টাকাপয়সা পাওয়া যাবে। বহুবার জানতে চেয়েছি, এই পর্যন্ত ট্রানজিট খাতে আমাদের আয় কত? জবাব নাই। বাজেটটা পুরো পড়ে দেখেন সরকার যত ইনকাম করছে, তার মধ্যে ট্রানজিটের মাশুলের কথা নাই।’

গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে ভারতের কোনো আপত্তি নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে চীন সফরের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গ তুলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার কোনো সরকার নাই। এ দেশে আছে অন্য দেশের তাঁবেদার সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন যাবেন, এটা নিয়ে ভারতের কোনো আপত্তি নেই। বাংলাদেশ কি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ? এ দেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে যাবেন, তাতে অন্য কোনো দেশের অনুমতি লাগবে?’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে না, আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার বাস্তবে এখন ভারতীয় স্বার্থে প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের সমঝোতা চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে না। এবার ভারতকে বিনা শুল্কে রেল সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে?’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব বক্তব্য দেন।