সরকার মিথ্যা অজুহাতে খালেদাকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে: মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, সরকার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে তাঁর উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে চলা গণ-অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আবদুল মঈন খান এসব কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, দুবারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি দীর্ঘ নয় বছর আন্দোলন–সংগ্রাম করে এ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আজ তাঁকে মিথ্যা মামলায়, রাজনৈতিক মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, এটা চলতে পারে না। তিনি গুরুতর অসুস্থ, তাঁর সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সুচিকিৎসা পাওয়া তাঁর মৌলিক অধিকার। কিন্তু সরকার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে; চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই সরকারের কাছে দাবি পেশ করে কোনো লাভ হবে না। গলায় গামছা দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে।
মান্না ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এত বড় নেতা কৃষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং কৃষিঋণ মওকুফ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অপেক্ষা করুন, দিন আসবে, আমাদের ইনিও ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু জনগণ তাঁকে ক্ষমা করবেন না।’ বিএনপি যেকোনো দলীয় গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
২০–দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন বলেন, খালেদা জিয়া আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, আর গণভবনে বসে একজন হায়েনার হাসি হাসছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন। আপনি এ জিঘাংসার রাজনীতি থেকে ফিরে আসুন। খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’
বিদেশে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে সকাল নয়টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, সকাল নয়টা থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর এক ঘণ্টা আগে থেকেই শত শত নেতা-কর্মী নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত পল্টনের এক পাশের সড়ক নেতা-কর্মীদের অবস্থানে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
অনশনে সংহতি জানিয়ে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দলের নেতা, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বক্তব্য দিচ্ছেন।
গণ-অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এমন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছে স্মরণীয় ও বরণীয়। শুধু তা-ই নয়, তিন–তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি দলের প্রধান। আজকে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা দাবি জানাই, মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ, তিনি দেশের সাধারণ কোনো নাগরিক নন।’
আবদুল হালিম বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মধ্যে রাজপথে ফিরে আসবেন।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমরা কাকে বন্দী রাখছি, কাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছি। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ফোর্স কমান্ডারের স্ত্রী, যিনি স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী।’ তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে দিলে বাংলাদেশের রাজনীতি এক দিকে যাবে, আর না দিলে আরেক দিকে। না দিলে বাংলাদেশের রাজনীতি যেদিকে যাবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আপনি যত অমানবিক হবেন, তার ১০ গুণ অমানবিকতা ফেরত পাবেন।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আজকে আমরা একটা মগের মুল্লুকে বসবাস করছি। ফাঁসির আসামিকে জেলখানায় বিয়ের ব্যবস্থা করছেন, আর খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য জামিন পান না। তিনি অনতিবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।