ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার আইন একটি চক্রান্ত: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রস্তাবিত ব্যক্তিগত সুরক্ষা আইনটি নাগরিকের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করার একটি চক্রান্ত। এ আইন গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তে এ কথা বলা হয়েছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সভা মনে করে, এ ধরনের আইন ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার কথা বলে নাগরিকের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করার একটি চক্রান্ত। এ আইন গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। জনগণের ব্যক্তিগত অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রস্তাবিত ব্যক্তিগত সুরক্ষা আইনের খসড়া সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশে গভীর উদ্বেগের কথা জানান। গতকাল আবার এটি ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল জানান, গতকাল শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। এর সভাপতিত্বে করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় আলোচ্যসূচির ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সভায় ১১ সেপ্টেম্বর হওয়া সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পাঠ করা এবং অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫–এর পটপরিবর্তন, জিয়াউর রহমানের সমাধি নিয়ে যে লাগাতার মিথ্যাচার করেছেন, এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ ও মিথ্যা তথ্য সংসদের প্রস্তাব করে তিনি (শেখ হাসিনা) মূলত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে দৃষ্টির আড়ালে রাখার ষড়যন্ত্র করছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিহাস বিকৃত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিকৃত অপপ্রচার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান সভা থেকে জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংসদে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার প্রণীত বিশেষ আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে বিল পাস করায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয় বিএনপির সভায়। সভা মনে করে, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল শুধু আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর লুণ্ঠনের স্বার্থে। তিনি বলেন, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সব কর্মকাণ্ডকে ইনডেমনিটি আইন পাস করে যথেচ্ছ দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ভাড়া প্রদানের কারণে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় একটি বিশাল অংশ আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের পকেটে গেছে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, প্রতিবছর কয়েক দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের আর্থিক লোকসান হয়েছে। নতুন করে এ আইনের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে লুটপাটের ব্যবস্থা আরও দীর্ঘায়িত করা হলো। সভায় অবিলম্বে এই বিল বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল জানান, দলের পক্ষ থেকে আগামী ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএনপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি ও কমিটি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে, কাজ চলছে এবং দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর কাজ চলছে। থানা-ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি হয়েছে। এখন জেলা পর্যায়ে শিগগিরই বেশ কটি হতে যাচ্ছে। যেহেতু দেশে করোনা পরিস্থিতি ছিল, সে কারণে সম্মেলনগুলো করা সম্ভব হয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ঠিক একইভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কয়েকটি জেলার সম্মেলন দ্রুত শেষ হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ ছিলেন, তখন পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বিদেশ যাওয়ার জন্য আবেদন হয়েছিল। তখন সেটা সরকার দেয়নি। মূল বিষয় হচ্ছে তারা (সরকার) খালেদা জিয়াকে এত বেশি ভয় পায়, তাঁকে কোনোমতেই মুক্ত করা বা দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি ভাবতেই পারে না। এ জন্য যখন তিনি অনেক অসুস্থ ছিলেন চিকিৎসকেরা অ্যাডভান্স সেন্টারে চিকিৎসার কথা বলছিলেন, তখন সরকার সেটাতে একমত হয়নি। তাঁকে আটকে রাখছে।’
এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দল যখন সিদ্ধান্ত নেবে, তখন আমরা চাপ প্রয়োগ করব।’
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলের মতামত বিএনপি কী পেয়েছে, সে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন আমাদের আলোচনা শেষ হবে, তখন তাদের মতামত জানতে পারব, আপনাদের এ বিষয়ে মতামত জানাতে পারব, দলের পরবর্তী কর্মপ্রণালি জানাতে পারব।’
বিএনপির মহাসচিব জানান, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ধারাবাহিক সভায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক আলোচনা হয়েছে। পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি, একদলীয় শাসনের প্রচেষ্টা, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া, মিথ্যা-গায়েবি মামলা—এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বিএনপির সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবখানেই থাকা উচিত। আমেরিকায় তো আরও বেশি। সেখানে শান্তিপূর্ণ একটা মিটিং হচ্ছিল, তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।’
১১ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলবের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আরেকটি অপকৌশল। এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে দমন করার জন্য এটা আরেকটি হাতিয়ার।’