বিচারবহির্ভূত হত্যার ধারাবাহিকতা বন্ধ করার চেষ্টা করছি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে বলেছেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শুরু করা এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উত্তরাধিকার বন্ধে তার সরকার অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা বলছেন। কিন্তু এটা কে শুরু করেছিল? এটি শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের আমলে। তখন আমাদের অনেক নেতা-কর্মীর লাশ পাওয়া যায়নি এবং এরপরে, এটি (বিচারবহির্ভূত হত্যা) প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে (খালেদা জিয়ার আমলে)। আমরা এর ধারাবাহিকতা বন্ধ করার চেষ্টা করছি।’ তাঁর সরকার (এ জাতীয়) অপরাধের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত) এবং আমরা কখনোই তা করব না।’
একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমালোচনা করার ক্ষেত্রে সকলকে বাস্তববাদী ও গঠনমূলক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা মাদক, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে তারা (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) যেন এ কাজে তাদের উদ্যম হারিয়ে না ফেলে। তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে আমাদেরও ভাবতে হবে যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে এবং তারা এ ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে।’ তিনি সকলকে মনে করিয়ে দেন যে তাঁর সরকার কোনো (অপ্রত্যাশিত) ঘটনা ঘটলে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। তারা অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমালোচনা ভালো তবে এটি মনে রাখা উচিত যে যারা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করে চলেছেন এবং যে কোনো বিপদে মানুষ যাদের কাছে ছুটে আসছে তারা যেন আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় পুলিশ হেফাজতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বুধবার ঢাকার একটি আদালত তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।
সামগ্রিক উন্নয়ন এবং কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রুখতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, বিশ্বে করোনাভাইরাস নিরাময়ে যে টিকা প্রথম আসবে, তার সরকার সেটি ব্যবহারে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়ে গবেষণা করছে। আমরা অনেক দেশের কথা শুনেছি (তাদের টিকা উদ্ভাবনের কথা)। আমরা টিকা পেতে সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং এই লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ করেছি। আমরা প্রথমে আসা টিকা গ্রহণ করব এবং আমাদের জনগণকে করোনাভাইরাস থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ব্যবহার করব।
জি এম কাদেরের উত্থাপিত স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি থেকে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় এবং অর্থনীতি ও উন্নয়নের চাকা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এ জন্য পানির মতো অর্থ ব্যয় করছে।
জনগণের জীবন বাঁচানোকেই প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য করে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বা কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা বিবেচনা করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে জনগণের জীবন রক্ষা করা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
দুধের জন্য চেয়ার বা টেস্ট কিট কেনার বিষয়ে জি এম কাদেরের দুর্নীতির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা কেবল একটি চেয়ার এবং একটি কিট কেনার জন্য নয় বরং দুধ পরীক্ষার জন্য এক ইউনিট চেয়ার কেনা এবং দুধ পরীক্ষার জন্য একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের জন্য ব্যয় করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে, যা অনেক উন্নত দেশ করতে পারেনি। কারণ, কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে তারা সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং করোনাভাইরাস জনিত কারণে দেশের মানুষকে ভোগান্তিতে যাতে পড়তে না হয়, এ জন্য এ পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশের জিডিপির ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, আমাদের কর্তব্য জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করা। আমরা তা করছি। বিপদ আসার পর হতাশ হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, বরং এর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উদ্দীপনা প্যাকেজ ছাড়াও তাঁর সরকার বিভিন্ন পেশার মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে, যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম। তিনি বলেন, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করছি। করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু স্থগিত থাকা সত্ত্বেও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশের ফরেন রিজার্ভ এখন ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার এবং দেশের আমদানির সঙ্গে রপ্তানি বৃদ্ধির একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর জন্য কথা বলেছেন।
সরকার তার খরচে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃতদেহ আনা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জি এম কাদেরের আরেকটি অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এখনো বিশেষ বিমানে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃতদেহ আনা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ওয়াসা পানির দাম কমানোর আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি পানির বিল কমানোর জন্য অপব্যবহারের পরিবর্তে পানি যথাযথ ব্যবহারের প্রতি আহ্বান জানান।
নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় যে নামাজ পড়ার সময় বিস্ফোরণে একাধিক লোক মারা গিয়েছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে একটি গ্যাস পাইপের ওপর মসজিদটি তৈরি করেছিল। তিনি সকলকে আগাম অনুমতি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মাণ না করার আহ্বান জানান।