২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

প্রত্যাশার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে আইভীর

টানা তৃতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সেলিনা হায়াৎ আইভীফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এতে নগরবাসীর প্রত্যাশার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ বেড়েছে তাঁর।

গত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতির অনেক কিছু বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতা, যানজট, ময়লা-আবর্জনা অপসারণসহ পরিবেশবান্ধব নারায়ণগঞ্জ নগরী গড়ে তোলার কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারেনি সিটি করপোরেশন। মেগা অনেক প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এবার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত সেবা ও স্বস্তি দিতে আইভী উদ্যোগী হবেন, এমন প্রত্যাশা নগরবাসীর।

নগরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা অপসারণ, যানজটের ভোগান্তি, একনেকে অনুমোদন হলেও শীতলক্ষ্যা নদীতে বন্দরবাসীর যাতায়াতের কদমরসুল সেতুর নির্মাণকাজ এখনো শুরু না হওয়া, পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বিগত দিনে সিটি করপোরেশনে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারেনি। মেলেনি। শহরের মণ্ডলপাড়া বাবুরাইল লেকের সেতুর নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে নগরীতে যানজটের ভোগান্তি আছে। রাজধানীর পাশের এই সিটির বাসিন্দারা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সেবার পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন।

২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর সিটি নির্বাচনে আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন। ওই নির্বাচনে আইভী তাঁকে ৭৮ হাজার ৯৬৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে আইভী শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। আইভী সিটি করপোরেশনের আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন।

২০১৬ সালের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনকে সবুজ ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ছিল আইভীর। নগরীর জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল সংরক্ষণ, সিটি করপোরেশনের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে শর্ট টাইম, মিড টাইম ও লং টাইম পরিকল্পনার মাধ্যমে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। মেয়র হিসেবে তিনি বাবুরাইল লেক সংরক্ষণ ও সিদ্ধিরগঞ্জ ডিএনডি ক্যানেল সংরক্ষণ, জিমখানা শেখ রাসেল পার্কসহ অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ করেছেন। শীতলক্ষ্যা নদীতে কদমরসুল সেতুর নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিসহ একনেকে অর্থ অনুমোদন হয়েছে। জালকুড়িতে প্রতিদিন ৬০০ টন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পিডিবির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ওই প্রকল্পের কাজও শেষের দিকে। এ ছাড়া অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।

এ বিষয়ে ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি নুরু উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিগত দিনে আইভীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেক কাজ শেষ হয়েছে, অনেক কাজ এখনো চলমান। মেয়র চাইলেও ফুটপাত হকারমুক্তসহ অনেক কাজ করতে পারেননি। নগরীবাসীর সমস্যা নিরসনে জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে কাজ না করলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না। প্রভাবশালী গোষ্ঠী পেছন থেকে ইন্ধন দিলে কখনোই সড়ক যানজট ও ফুটপাতমুক্ত করা যাবে না। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনটি চাষাঢ়া রেলস্টেশন পর্যন্ত রেখে সেটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার করলে নগরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।

এবারের সিটি নির্বাচনে মেয়র আইভীর স্লোগান ছিল ‘সবুজ শ্যামল জনপদ, নগর গড়ি নিরাপদ’। সোয়া ৫ লাখ ভোটারের এই সিটিতে মোট জনসংখ্যা ২০ লাখের বেশি। মেয়র হিসেবে এই দফার দায়িত্বের বিষয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ আগেও ছিল, এখনো আছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েই নগরবাসীর সেবায় কাজ করে যেতে চাই। বিগত দিনে সিটি করপোরেশনের চলমান মেগা প্রকল্পের কাজগুলো শেষ করব। খেলার মাঠ, পার্ক, শীতলক্ষ্যা সেতু, পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে উদ্যোগী হব। নগরবাসী আমার ওপর পুনরায় আস্থা রেখেছেন। তাদের আস্থার জায়গা অটুট রেখে অগ্রাধিকার দিয়ে চাহিদার ভিত্তিতে কাজ শেষ করব।’

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সময়ে আইভী দৃশ্যমান উন্নয়নকাজ করেছেন। আগামী দিনে তাঁকে খাল ও জলাশয় উদ্ধার ও সংরক্ষণে মন দিতে হবে। শহরের প্রধান সমস্যা যানজট। অব্যবস্থাপনার কারণে যানজট হচ্ছে, এগুলো ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে ওভারপাস ও ফুটওভারব্রিজ করতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা প্রথম আলোকে বলেন, আইভীর কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা বেড়েছে। আগে বিরোধিতা ও বাধার মুখে তিনি যেসব কাজ করতে পারেননি, এবার সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁকে চেষ্টা করতে হবে। শীতলক্ষ্যাকে দূষণমুক্ত, ফুটপাত হকারমুক্তসহ জনগণের কাছে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়নে তাঁকে উদ্যোগী হতে হবে।