পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়ে ‘নারী জাতিকে’অপমান করা হয়েছে: মির্জা ফখরুল
রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমস্ত ‘নারী জাতিকে’ অপমান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। এ ধরনের রায় আমরা মেনে নিতে পারি না। বিচারব্যবস্থাকে পুরো দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে।’
‘দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে বিএনপি। সেই উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রেইনট্রি হোটেলে দুজন শিক্ষার্থী ধর্ষণ হয়েছিল, গতকাল সেই মামলার রায় হয়েছে। আমরা পত্রিকায় দেখেছি, ঘটনা ঘটেছে, আদালত স্বীকার করছে।
কিন্তু রায় হচ্ছে বেকসুর খালাস। কারণ হচ্ছে, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা খুবই ক্ষমতাশালী। আজকে সমস্ত ‘নারী জাতিকে’ অপমান করে তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন রামদা, ছুরি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। মন্ত্রীরা বলছেন, এটা তেমন কিছু নয়। নির্বাচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়েছে। সংঘর্ষের দায়দায়িত্ব আমাদের নয়। লজ্জা নাই, শরম নাই। এই বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে তিনি (সিইসি) ধ্বংস করলেন।’
এ সবকিছুর মূলে শেখ হাসিনা অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল জানান, শেখ হাসিনা সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে।
সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল জানান, খনার বচন আছে—রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজার কষ্ট হয়। এটা আজকে এত মিলে যায়। আজকে এমন হয়েছে, সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝার শক্তিও তার নেই।
সরকার তেল, কেরোসিন, ডিজেলের দাম বাড়াল। ডিজেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে বাস, ট্রাকের মতো পরিবহন। পাজেরোর মতো ব্যক্তিগত গাড়িতে ডিজেল ব্যবহার হয় না। কেরোসিন ব্যবহার করে গ্রামের মানুষ। এলপিজিতে উবার চলে। প্রজারা কষ্ট পায়।
আর রাজা প্যারিস, লন্ডন, গ্লাসগোতে বক্তব্য দেন। কিন্তু তার মানুষেরা কেমন আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১০০টি গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সভা ডেকেছেন। সেখানে বাংলাদেশকে না ডাকায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল জানান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশ আজকে অগণতান্ত্রিক।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে রাজকীয় বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন। কেন? আপনাদের উদ্দেশ্য অন্য রকম। এ দেশে স্থায়ী একটা ইস্যু তৈরি করে রেখে নিজেরা ওখান থেকে ফায়দা লুটতে চান।’
২০ দলীয় জোটের প্রত্যেকের শক্তিকে সুসংহত করতে হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নিজেরা শক্তিমান হয়েই একসঙ্গে ধাক্কা দিয়ে এই সরকারকে সরাতে পারব। বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল, বিএনপির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। বিএনপিকে নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে তো। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। ৫০০–এর অধিক নেতা আমাদের গুম হয়ে আছে। পাঁচ হাজারের বেশি নেতা–কর্মী খুন হয়েছে। ছোট একটা কিছু হলেই মামলা দিয়ে দেয়। পূজায় হামলা নিয়ে একেকটা মামলায় দুই হাজার করে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি ধরছে, আর পুরে দিচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে কর্মসূচি দেন, মাঠে নামেন। তারপর আন্দোলন গড়ে উঠবে, আমি এ কথার সঙ্গে একমত নই। আপনারা কর্মসূচি দেন—এ কথা বলে সরে গেলে চলবে না। বিএনপিকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই আন্দোলন দানা বাঁধবে।
বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘রাজনীতিতে ঐক্যে পৌঁছানো অনেক বড় বিষয়। আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে এ সংগ্রাম বিএনপির একার নয়, সবার। কর্মসূচি দেন, মাঠে নামেন, আমরাও মাঠে নামছি।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির জানান, বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এ সরকারকে ফাঁকা মাঠে আর গোল করতেও দেওয়া হবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাগপার সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। এ ছাড়া জাগপার কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন।