কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী পাঁচজন। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক (রিফাত) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হকের (সাক্কু) মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।
স্থানীয় দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনী মাঠে এই দুই প্রার্থীর সামনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। আরফানুলের সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন থাকলেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর ১৩ নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা মাঠে নেই। প্রচারণায় নেই আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আফজল খানের পরিবারের সদস্যরাও। আওয়ামী লীগের ৪১ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও তাঁদের নাম নেই। এতে আরফানুল কিছুটা ‘বেকায়দায়’ আছেন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা–কর্মী, সমর্থক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, আরফানুলের সামনে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী থাকা, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গোমতী নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের বিরোধী ভোট।
প্রয়াত আফজল খানের অন্তত পাঁচজন অনুসারী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১২ সালে আফজল খান ও ২০১৭ সালে তাঁর মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তখন দলের একাংশ তাঁদের পাস করতে দেয়নি। আড়ালে মনিরুল হককে ভোট দেয়। এবার তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আরফানুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগ, ২৭টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা এককাট্টা। সংরক্ষিত সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা নৌকার পক্ষে আছেন।’ আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ নিয়েই রাজনীতি করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরফানুল এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কিছুটা অসুস্থতার কারণে তিনি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাইছেন না। বিষয়টিকেও কেউ কেউ ‘নেতিবাচক’ হিসেবে তুলে ধরছেন। এর জবাবে আরফানুল বলেন, ‘আমি ভোটের জন্য রাস্তায় নামলে যানজট তৈরি হবে।’
এদিকে টানা দুই দফায় মেয়র থাকা মনিরুলের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। দলীয় নেতা–কর্মী, সমর্থক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করায় তিনি বেকায়দায় রয়েছেন। পাশাপাশি নগরের জলাবদ্ধতা ও যানজট, উন্নয়নকাজে নিম্নমানের অভিযোগ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিজের সম্পদ বৃদ্ধি, বিএনপি ঘরানার একাধিক মেয়র প্রার্থী থাকা, পদত্যাগের পর দল থেকে বহিষ্কার হওয়া, বিএনপির নেতাদের পাশে না পাওয়া, গত নির্বাচনের অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ না করাসহ আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাঁর।
গতবারের নির্বাচনী ইশতেহারের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করার দাবি করে মনিরুল বলেন, ‘এবার জয়ী হলে অসমাপ্ত কাজ করব। দলের পদবিধারী ব্যক্তিরা আমার সঙ্গে না থাকলেও তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা আছেন। কুমিল্লার লোকজন আছেন।’
জানতে চাইলে কুমিল্লার ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, এসব চ্যালেঞ্জকে যিনি সঠিকভাবে মোকাবিলা ও সংশোধন করে প্রচারণা, গণসংযোগ করতে পারবেন, তিনিই শেষ হাসি হাসবেন।