ডিজিটাল না উন্নয়ন, কোনটা গুরুত্ব পাবে আ.লীগের ইশতেহারে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুরুতেই দলটি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ গুছিয়ে রাখছে। ইশতেহারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাত (আইসিটি) তথা ডিজিটাল খাততে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবছেন দলটির কোনো কোনো নীতিনির্ধারক। আবার কেউ কেউ বাংলাদেশের সমৃদ্ধি বা উন্নয়নকে সামনে আনার পক্ষেও মত দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করতে বলেছেন। ফলে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক নেতাই মনে করেন এখন ডিজিটাল সময়। ফলে এ বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পরবর্তী ভোটের আগে দেশে ফাইভ-জির ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে। মানুষ দৈনন্দিন কাজ ঘরে বসে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে করতে পারছেন। একে আরও তৃণমূলে নেওয়া, নিত্যনতুন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ ভালোভাবে পৌঁছাতে পারবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে টানা যাবে।
এই নেতা বলেন, একটি অংশের মত হচ্ছে উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া। আগামী নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর নিচের টানেলের সুবিধা পাবে মানুষ। সড়ক যোগাযোগ, মাথাপিছু আয়, প্রবাসী আয়েও মানুষ সুখবর পাবে। দ্বাদশ সংসদ চলার মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। এসব কারণে ‘সমৃদ্ধি’কে সামনে আনার পক্ষেও নেতাদের মত আছে। তিনি বলেন, নানা মত আসছে। তবে এ দুটি মত বেশি আসছে। এখনো অনেক সময় আছে। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলীয় সভানেত্রী বিভিন্ন মতের মধ্য থেকে একটি চূড়ান্ত করবেন। সে অনুযায়ী ইশতেহার চূড়ান্ত হবে।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই সময় দলটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনকে সর্বাধিক গুরুত্ব নিয়ে ইশতেহার করেছিল, যা ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তাও পায়। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের তেমন পরিবর্তন ছিল না। ওই নির্বাচনে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ১৫৩ জন সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিল। নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার করা হয়েছিল, সেখানে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এই স্লোগান ব্যবহার করেছিল ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে নির্বাচন ইশতেহার নিয়ে কথা বলেছে প্রথম আলো। তবে এই নেতারা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।
একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশকে এক সূত্রে গাঁথার একটা চেষ্টা তাঁদের আছে। এ দুয়ের সমন্বয় ঘটানো হতে পারে। তবে এখনো আলোচনা আরও বাকি। বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন। মাঠের মানুষের মনোভাব যাচাই-বাছাই হবে। বিভিন্ন খাত নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার জরিপের ফলাফলগুলোকেও বিবেচনায় আনা হবে। মানুষ যেন আকৃষ্ট হয়, এমন একটি ইশেতহার উপহার দেবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ বলছে, তাদের সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিজিটাল যুগে বিশ্ব পরিমণ্ডলে সামনের কাতারে থাকা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বর্ষ ২০২১, এসডিজি বর্ষ ২০৩০ ও উন্নত বাংলাদেশ বর্ষ ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডিজিটাল ক্ষেত্রে বর্তমানে যে বিপ্লব চলছে, তা ক্রমে যুগোপযোগী করে অগ্রসর করার ভেতর দিয়েই গড়ে উঠবে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে একসঙ্গে চলতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আ.লীগের পরিকল্পনা
সরকারের এই আমলে ফাইভ-জি চালু করা। আগামী মেয়াদে এর ব্যবহার সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, বিগ ডেটা, ব্লক চেইন, আইওটিসহ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিকাশ বড় পরিসরে ঘটানো। ই-পাসপোর্ট এবং ই-ভিসা চালু করা এবং সবাই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া। শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সফটওয়্যার, সেবা ও ডিজিটাল যন্ত্রের রপ্তানি বাড়ানো ও প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ এবং আর একটি সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন। সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়ানো হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসংগত পর্যায়ে নামিয়ে আনা অব্যাহত রাখা। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে আরও বিনিয়োগ করা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন এই আমলেই দেখতে পাবে মানুষ। পাশাপাশি আগামী মেয়াদে সড়ক ও রেলপথে ব্যাপক উন্নয়ন করা। আকাশপথে যোগাযোগের পরিধি বাড়ানো।
স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানো। স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভোগান্তি কমানো ও ব্যয় কমানোর দিকে নজর দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিমা চালুর চিন্তা করা হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার যুগোপযেগী পরিবর্তন আনা হবে। ইতিমধ্যে এর একটা ধারণা মানুষ পেয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করা হবে।