খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তবে কাকে সরকারপ্রধান করবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন।
আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। ২০ জুন অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
আজ বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তবে কাকে সরকারপ্রধান করবে?
এর উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার, নির্বাচন তো হবেই না যদি হাসিনা ক্ষমতায় থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সে নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগকে সরে যেতে হবে, নির্বাচনকালে যদি নিরপেক্ষ সরকার হয়, তাহলেই শুধু নির্বাচন হবে। তখনই প্রশ্ন আসবে যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এটা নিয়ে তো প্রশ্ন নেই। আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তিন–তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব প্রধানমন্ত্রী হবেন। বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই।’
সরকারি দলের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বরং তাদের সংকট আছে, একমাত্র হাসিনা ছাড়া তো কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেলে কী যুদ্ধ হয়, সেটা তারাই বলতে পারবেন।’
যারা চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে চায়, তাদের আমন্ত্রণে বিএনপি যেতে পারে না
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে বিএনপি যাবে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা মানুষ হত্যা করে, যারা এ দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে পদ্মায় ডুবিয়ে মারতে চায়; যারা এ দেশের সবচেয়ে প্রথিতযশা এবং দেশের জন্য সবচেয়ে সম্মান অর্জন করে আনা ব্যক্তি—গোটা পৃথিবীতে যিনি নন্দিত মানুষ ড. ইউনুস, তাঁকে যারা চুবিয়ে চুবিয়ে মারতে চায়, তাদের আমন্ত্রণে বিএনপির কোনো নেতা বা কর্মী কখনোই যেতে পারে না।’
ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ বক্তব্যকেও স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার বলেন মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ সময় ২০০৪ সালের মার্চের বিএনপি সরকারের সময়ে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা প্রতিবেদন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।
সমীক্ষার সারসংক্ষেপ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটার। প্রস্থ ২৫ মিটার। নদীশাসন ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। এর নির্মাণকাজ ২০০৮ সালের অক্টোবর নাগাদ শুরু এবং ২০১৩ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা। সমীক্ষা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নির্মাণে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৭ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা করা সম্ভব হয়নি, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখানে অফিশিয়ালি এত বড় একটি সমীক্ষা রিপোর্ট দেওয়ার পরেও কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলতে পারেন, বিএনপি সরকার আসার পরে এটাকে বন্ধ করে দেয়। অথচ এই সমীক্ষা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তারা পরবর্তী সময়ে কাজ করেছে। কিন্তু তিনি সমানে বলে যাচ্ছেন যে বিএনপি সরকার এটা বন্ধ করে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যাটা তো হয়েছে অন্য জায়গায়। সমস্যা হয়েছে কাজ শুরু করার পর যখন বিশ্বব্যাংক ফান্ড বন্ধ করে দিল দুর্নীতির কথা বলে। তখন থেকেই তো সমস্যা শুরু হয়েছে। সেটার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ী করেন, ড. ইউনূসকে দায়ী করেন। কোথায় পেলেন তিনি...। কীভাবে দেখলেন যে দুনীতির কথা বিএনপি বা ইউনূস বলেছে। তখন সে কথা তো আসেইনি। আমরা তো বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথা তোলার পরে জানলাম যে দুর্নীতি হচ্ছে।’
ফখরুল দাবি করেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে দুনীতি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকে সেটা প্রমাণিত হয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকাতে পৌঁছেছে।’
তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নাগরিক নন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, এটা একেবারেই মিথ্যা কথা। আমরা আগেও বলেছি, তিনি অ্যাসাইলামে আছেন। এটা নিয়ে কোনো রাখঢাক নেই। ব্রিটেনের নাগরিকত্বের জন্য তিনি কখনো আবেদনও করেননি। এসব বাজে কথা বলার তো কোনো যুক্তি নেই। আমিও ব্যক্তিগত প্রশ্ন অনেক করতে পারি, কিন্তু সেটা আমরা করতে চাই না। সেটা রাজনৈতিক শালীনতা–শিষ্টাচারে উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।’
হেলিকপ্টারে দেখেছেন, কিন্তু বন্যার্তদের কাছে যাননি
প্রধানমন্ত্রী সিলেট গিয়েও বন্যাদুর্গত মানুষদের দেখতে না যাওয়ার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কালকে সিলেট গেছেন। সিলেটে গিয়ে হেলিকপ্টারে করে দেখেছেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু সার্কিট হাউসে গিয়েছেন, মিটিং করেছেন, কিন্তু একটু এগিয়ে গিয়ে বন্যার্তদের মাঝখানে তিনি যাননি। তাদের (বন্যার্তদের) যে একটু সাহস দেখাবেন, সেটাও তিনি করেননি। উপরন্তু তিনি সিলেটের মেয়র আরিফ সাহেবকে বলেছেন, কোথায় তোমার বিএনপি, কত দিয়েছে বিএনপি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো বিএনপির দায়িত্ব নয়। সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের। তিনি গেছেন গতকাল আর বিএনপি তার তিন দিন আগে থেকে ত্রাণের কাজ শুরু করেছে। নিজেরা ১০–২০ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। যখন তিনি এসব কথা বলেন, তখন তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) নিজের দিকেও একটু তাকানো দরকার যে তাঁরা কী করছেন এবং সেটা কতটুকু। পত্রিকায় দেখলাম, ৩০ লাখ মানুষের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা নেই বললেই চলে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসবে অতিরিক্ত মনোযোগী হওয়ায় দুর্গত মানুষের আহাজারি সরকারের কানে যাচ্ছে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, সব উৎসব পরিহার করে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটির প্রধান ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।