একটা নষ্ট সময় যাচ্ছে: মির্জা ফখরুল
দেশে ও বহির্বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে সমস্ত বিশ্বেই মনে হয় একটা নষ্ট সময় যাচ্ছে। কর্তৃত্ববাদিতা, অন্যের অধিকার হরণ করা, অন্যের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে প্রতিদিন।’
‘রামু ট্র্যাজেডি’র আট বছর উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতাশালী, পরাক্রমশালী, তারা নিজেদের সম্পদকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, রাজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। ঠিক একইভাবে আজকে বাংলাদেশেও একটা শক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষের অধিকারগুলো হরণ করেছে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
রামুর ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এই প্রবণতা বেড়ে গেছে। দেখা যায় যে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কখনো নিরাপদ বোধ করেনি, তাঁদের সম্পদ দখল করে নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানিরা শত্রু সম্পত্তি আইন করেছিল। সেই আইন এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, ‘এদের একটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আছে। মুখে তারা সব সময় বলবে যে আমরা সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করি। অথচ তাদের নেতাদের দ্বারা, তাদের সময়েই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘুর অধিকারগুলো হরণ হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, সংবিধান নেই। এককথায় এখন এটা পুরোপুরিভাবে গণতন্ত্রবিহীন একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে। মানুষের কারোরই, সেটা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হোক, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী হোক, ইসলামধর্মাবলম্বী হোক—কারোরই কোনো অধিকার এখানে নেই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে বলেছিলেন, আজকে দেশ ও জাতির জীবনে যে সংকট উপস্থিত, এই সংকট বিএনপির নয়, খালেদা জিয়ার নয়, কোনো ব্যক্তির নয়, এটা আজকে সমগ্র জাতির। এই সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হলে একাত্তর সালের মতো একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে সরাতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যিনি তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্রের পতাকা তুলে ধরেছেন, তাঁকে মুক্ত করতে হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দূর করতে হবে, যাঁরা কারাগারে আছেন, তাঁদের বের করতে হবে। একটা মুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, দীপেন দেওয়ান, অপর্ণা রায় দাশ, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী।