যাঁর নকশাকৃত ডুডলে সেজেছে প্রথম আলো

‘প্রথম আলো থেকে বলছি। আপনার পাঠানো ডুডলটি সেরা নির্বাচিত হয়েছে। অভিনন্দন। আপনার কেমন লাগছে?’

‘কী বলেন…! আনন্দ, খুশি, ঈদ—মানে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’

ফোনের ওপ্রান্ত থেকে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানান শিল্পী মনজুর রহমান। প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ডুডল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত সেরা হয়েছেন তিনি। তাঁর নকশাকৃত ডুডলে আজ সেজেছে প্রথম আলো পত্রিকা এবং প্রথম আলো ডটকমের লোগো। বিজয়ী হিসেবে তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার।

আয়োজনটি সম্পর্কে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে জানতে পারেন মনজুর রহমান। ডুডল প্রতিযোগিতাবিষয়ক এক পোস্টের কমেন্টে তাঁকে ‘মেনশন’ করেন পরিচিত এক আপু। তারপর থেকেই মনজুর রহমানের ভাবনা শুরু হয় ডুডলের ডিজাইনটি কেমন হতে পারে—তা নিয়ে।

মনজুর রহমান

মনজুর রহমান বলেন, ‘ডুডলটি নকশা করার সময় প্রথম আলোর ১৯৯৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ছাপা পত্রিকা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার যাত্রাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এছাড়া ডুডল প্রতিযোগিতার নিয়ামাবলীও মাথায় রাখতে হয়েছে। তাই ডুডলটির ওপরে উদযাপন–আবহ এবং নিচে ২৫ বছরের পথচলার দৃশ্যগুলো ফুটিয়ে তুলেছি। নকশাটি করতে সময় লেগেছে একদিন।’

মনজুর রহমানের বেড়ে ওঠা ঢাকার সাভারে। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। তারপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি বলেন, ‘চারুকলা বিভাগে পড়াশোনা করলেও আঁকাআঁকির হাতেখড়ি সাভারের চারুলতা স্কুলের শিক্ষক আবুল কাশেম হিমু ভাইয়ের কাছ থেকে। সেখানে থাকা অবস্থায় প্রথম আলোর বন্ধুসভার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর আহত ও উদ্ধারকাজে জড়িতদের প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে বন্ধুসভার পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলাম।’    

মনজুর রহমানরা দুই ভাই, এক বোন। বর্তমানে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল আর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মনজুর রহমান।

রজতজয়ন্তী উপলক্ষে প্রথম আলোর লোগো নিয়ে স্ট্যাটিক-ডায়নামিক-অ্যানিমেটেড ডুডল আঁকা প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে ৭৭৩টি ডুডল জমা পড়ে। জমাকৃত ডুডল থেকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় ৬০টি। সেখান থেকে বিচারকেরা সেরা ডুডলটি নির্বাচিত করেন।

ডুডল আঁকা প্রতিযোগিতার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিচারকেরা
ছবি: প্রথম আলো

এই নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারক হিসেবে ছিলেন ক্রিয়েটিভ সলিউশন কোম্পানি ডটবার্থের চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার যাইয়্যানুল হক। এ ছাড়া বিচারক প্যানেলে ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন, হেড অব ইন্ট্রিগ্রেটেড গ্রাফিকস সৈয়দ লতিফ হোসাইন, চিফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার এ বি এম জাবেদ সুলতান, ডিজিটাল টেকনোলজি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক কিউ এম আশফাক আলী, ওয়েব গ্রাফিকস বিভাগের উপব্যবস্থাপক মনোরঞ্জন সূত্রধর, ডিজিটাল মার্কেটিং লিড মেহবুব জাবেদ ও কনটেন্ট ম্যানেজার খায়রুল বাবুই।

শিল্পী রাজু সরকারের করা ডুডল আছে সংক্ষিপ্ত তালিকায়।

প্রতিযোগিতা সম্পর্কে যাইয়্যানুল হক বলেন, ‘এ ধরনের একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। পাঠকের পাঠানো ডুডলগুলো দেখতে গিয়ে তাদের বৈচিত্র্যময় শিল্পভাবনায় সত্যি চমকিত হয়েছি। বিভিন্ন ডুডলের নকশায় অংশগ্রহণকারীরা প্রথম আলোর লোগোতে ২৫ বছরের প্রথম আলোর বিভিন্ন কার্যক্রম-উদ্যোগ, উদ্‌যাপন ও আনন্দের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে আমি অভিভূত। আমি মনে করি, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেরই ভবিষ্যতে সফল শিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

শিল্পী রাফাত হোসাইনের করা ডুডল আছে সংক্ষিপ্ত তালিকায়।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রথম আলো পাঠকদের জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল আয়োজন করে আসছে। ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডুডল আঁকা প্রতিযোগিতাটি ছিল এমনই একটি উদ্যোগ।

শিল্পী মাধবী সরকারের করা ডুডল আছে সংক্ষিপ্ত তালিকায়।
এই ডুডলটি তৈরি করেছেন শিল্পী সানজিমা ইসলাম
শিল্পী সাদিয়া তাবাসসুমের তৈরি করা ডুডল
প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডুডলটি একেছেন শিল্পী নাহিদা নিশা
শিল্পী তানজিনা আফরোজের নকশা করা ডুডল
এই ডুডলটি নকশা করছেন শিল্পী মোহাইমিন সুলতানা
প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই ডুডলটির নকশা করছেন ফারদিন রোহান
মো. রায়হান উদ্দিন খান এই ডুডলটির শিল্পী