সব মা-ই সুপারহিরো
>মা সংগ্রাম করে বড় করছেন সন্তানকে। সন্তান এগিয়ে যাচ্ছে সোনালি ভবিষ্যতের দিকে। আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবসে সন্তান লিখেছেন তাঁর সংগ্রামী মাকে নিয়ে।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আমার মায়েরও ছিল। কিন্তু আর্থিক কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাঁর ওপর নানুর পরিবার খুব রক্ষণশীল। সে বাড়ির কোনো মেয়ে বাড়ির বাইরে কাজ করেনি। ১৯৯৭ সালে আব্বুর চাকরি চলে যাওয়ার পর আম্মু এবং আব্বু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রোজগারে নেমেছিলেন। দুজন মিলে একটা ওষুধের দোকান দিয়েছিলেন। বাড়ির মেয়ে নিজ হাতে ওষুধ বিক্রি করবে বা দোকান পরিষ্কার করবে, এটা আমার নানুর পরিবারে কেউ কখনো কল্পনাও করেননি।
আশপাশের অনেকে অনেক কথা বলেছে। কিন্তু মা সেসব কানে না তুলে ব্যবসা আর সংসার, দুটোই সামলেছেন। অসুস্থতার কারণে আমার বাবার চোখের প্রায় ৮০ শতাংশ দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। মা হাল ছাড়েননি। তাই, ‘তোমার মা কী করেন?’—এই প্রশ্ন আমার খুব পছন্দ। খুব গর্ব নিয়ে আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিই। নিজে চিকিৎসক হতে পারেননি। কিন্তু ফার্মেসির স্বল্প আয় দিয়ে মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর জন্য যা যা করা দরকার, মা সব করেছেন।
করোনা মহামারির এই সময়েও হাসপাতালে কাজ করার ব্যাপারে সব সময় উৎসাহ দিচ্ছেন তিনি। মা-বাবা থাকেন ঢাকায়। রোগীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে আমি যেন কখনো পিছপা না হই, সেটা সব সময় মনে করিয়ে দেন। সন্তানের জীবনের ঝুঁকি জেনেও কখনো বাড়ি ফিরে আসার কথা বলেননি। আমাদের রোগীরাও কারও বাবা, কারও মা কিংবা কারও সন্তান—মা এই কথাই সব সময় মাথায় রাখতে বলেন।
আমার কাছে আমার মা একজন সুপারহিরো। শুধু আমার মা নন, সব মা–ই নিশ্চয়ই একেকজন সুপারহিরো। মা দিবসে তাই সব সুপারহিরোকে জানাই ভালোবাসা।
তাহমিনা আহমেদ : ইন্টার্ন চিকিৎসক, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (দিনাজপুর মেডিকেল)।