সাগরে হারিয়ে বেঁচে ফেরা
>তাঁরা সাগরে নেমেছিলেন রোমাঞ্চের টানে, জীবিকার প্রয়োজনে। ঝোড়ো হাওয়া কিংবা আকস্মিক দুর্ঘটনায় হারিয়েছিলেন উপকূলে ফেরার আশা। তবু নাটকীয়ভাবে বেঁচে ছিলেন তাঁরা, ফিরে এসেছেন লোকালয়ে।
সাগরে ৪৩৮ দিন
২০১২ সালের নভেম্বর মাস। মেক্সিকোর জেলে হোসে সালভাদর আলভারেঙ্গা আর তাঁর স্ত্রী এজেকুয়েল একটা মোটরচালিত নৌকা নিয়ে বের হয়েছিলেন মাছ ধরতে। এরপর তাঁদের ভাগ্যে যা ঘটল, তা রীতিমতো ইতিহাসের অংশ।
সেদিন মেক্সিকো উপকূলে এক ঝড় বয়ে গেল। তাঁদের নৌকাটিকে টেনে নিয়ে গেল উপকূল থেকে অনেকটা দূরে। একসময় ঢেউয়ের তোড়ে ধ্বংস হয়ে গেল নৌকার মোটর। তখন তাঁরা চলে গেছেন গভীর সাগরে। নির্মম সত্য মেনে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ভাসতে থাকলেন নোনা জলে। প্রায় চার মাস পর প্রশান্ত মহাসাগরে মারা যান এজেকুয়েল।
সঙ্গী হারানোর বেদনা বুকে চেপেও হাল ছাড়েননি আলভারেঙ্গা। দিনের পর দিন বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছেন। খাওয়ার জন্য কখনো মাছ, কখনো কচ্ছপ, কখনো পাখি, আবার কখনোবা হাঙর শিকার করে দিন কাটতে থাকল আলভারেঙ্গার। তত দিনে হয়তো ছেড়েই দিয়েছেন উপকূলে ফেরার আশা। তবে প্রকৃতিই তাঁকে নিয়ে এল প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের ইবোন আটোল দ্বীপে। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি দুই স্থানীয় যুবক উদ্ধার করলেন তাঁকে। তত দিনে কেটে গেছে ৪৩৮ দিন। এখন পর্যন্ত এটিই সমুদ্রে হারিয়ে গিয়ে একাকী সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকার ঘটনা।
৭৬ দিনের দুঃসাহসিক অভিযান
নিজের বানানো নৌকার ওপর স্টিভ কালাহানের একটু বেশিই আস্থা ছিল। এতটাই আস্থা ছিল যে সেই নৌকা নিয়েই আটলান্টিক পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিধি বাম, সমুদ্রে ভাসার এক সপ্তাহের মাথায় সেই নৌকা ভেঙে যে অংশটুকু টিকে ছিল, সেটাকে ভেলা বলাই ভালো। সেই ভেলায় চড়েই ৭৬ দিন আটলান্টিক মহাসাগরে ভেসে বেড়ান স্টিভ।
তবে খাদ্যসামগ্রী হারালেও তাঁর সঙ্গে ছিল একটা মাছ ধরার বন্দুক; যা দিয়ে মাছ ধরে বেশ কিছুদিন কাটিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। এক বদরাগী মাছ তাঁর বন্দুক ও ভেলা—দুটোই ভেঙে দেয়। বিপদে পড়েন স্টিভ। সেই বিপদ থেকে তাঁকে ফ্রান্সের উত্তর আটলান্টিকের দ্বীপ গুয়েদালোপের কোস্টগার্ডরা উদ্ধার করলে শেষ হয় তাঁর ৭৬ দিনের ‘অভিযান’।
টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে আকিব মো. সাতিল