জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালচিত্র
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেলেই দেয়ালে দেয়ালে কিছু আঁকা ছবি নজর কাড়ে। এগুলো আলোচনারও জন্ম দিয়েছে নানা সময়। কিছুদিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দেয়ালে আঁকা কিছু ছবি নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। ছবিগুলো ছিল অস্কার নমিনেশন পাওয়া বিখ্যাত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র সং অব দ্য সির। ফেসবুকের মাধ্যমে এই চলচ্চিত্রের বিখ্যাত পরিচালক টম মুরের চোখে তাদের আঁকা ছবিগুলো পড়েছিল। তিনি ছবিগুলো দেখে অনেক খুশি হন এবং তাঁর টাইমলাইন থেকে সেগুলো শেয়ার করার কথাও বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজেদের উদ্যোগেই এই ছবিগুলো আঁকেন। যাঁদের মধ্যে অন্যতম চারুকলা বিভাগের আবদুল্লাহ মামুর। ক্যাম্পাসের দেয়ালচিত্রের পেছনের চিত্রটা জানা যায় তাঁর কাছেই, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার এসে অবাক হয়েছিলাম একটা বিষয় খেয়াল করে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি দেয়ালেই কোনো না কোনো সংগঠন, বিসিএস কোচিং কিংবা অমুক হেকিমি দাওয়াখানা গোছের হাবিজাবি পোস্টার মেরে দেয়ালগুলোকে একেবারে নোংরা করে রেখেছে।’ যা মামুরের চোখ, মন—দুটিকেই ব্যথিত করেছিল। দেয়ালের এ অবস্থা দেখে তিনি ভাবতেন কিছু একটা করার। যেহেতু চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মামুর, তাই নিজেই এগিয়ে এলেন দেয়াল রাঙাতে। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন একই বিভাগের অর্পণ অধিকারী। কিন্তু সমস্যা বাধে রং নিয়ে। রঙের খরচ তো নেহাত কম নয়। তখন তাঁরা নিজেদের হাতখরচের টাকা থেকেই কিছু টাকা কষ্টেসৃষ্টে বাঁচিয়ে রং কিনলেন। সেই রঙে ক্যাম্পাসের একটা দেয়াল রাঙিয়ে ফেললেন। এরপর আরও একটা, তারপর আরও একটা। মামুর বলছিলেন, ‘এই রঙের কাজে আমাদের সঙ্গে জুটে গেল ক্যাম্পাসের আরও অনেক শিক্ষার্থী।’ কিন্তু এভাবে নিজেদের টাকায় আর কত দিন? রং কেনার অভাবে দু-তিনটা কাজ করার পরেই বন্ধ হয়ে গেল কাজ।
এরপর অবশ্য ভাগ্য আবার কিছুটা সুপ্রসন্ন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী এবং শুভাকাঙ্ক্ষী এগিয়ে আসেন রঙের খরচ দেওয়ার জন্য। শুরু হয় আঁকাআঁকি। আবদুল্লাহ মামুর বলেন, ‘ক্যাম্পাসের দেয়ালে যখন কোনো ছবি আঁকা হয়, এরপরের কিছুদিন সেটার সামনে রীতিমতো ছবি তোলার উৎসব শুরু হয়ে যায়।’